জলজ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম। যেখানে পানি সেখানেই মাছ, এ ছিল বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য। একদা এ দেশের নদী-নালা, পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, ধানক্ষেত, রাস্তার পাশের ডোবাতে ছিল ছোট মাছের প্রাচুর্য্যতা। এসব মাছের মধ্যে ছিল পুঁটি, টেংরা, মলা, ঢেলা, পাবদা, চান্দা, খলিশা, কাচকি, কৈ, টাকি, বেলে, বাইম, গুলশা, শিং, মাগুরসহ আরও অনেক জাতের মূল্যবান ছোট মাছ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে মানুষের বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য অনেক ছোট বড় জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। পদ্মা নদীর উজানে নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ, মৎস্য সম্পদের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় না এনে বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ কাঠামো নির্মাণ, বর্ষাকালে অত্যধিক পলি জমার কারণে অনেক নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীর বুকে জেগে উঠা বিশাল চর সৃষ্টির ফলে সংকুচিত হচ্ছে মাছের আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র। তাছাড়া বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল শস্য উৎপাদনে সেচের জন্য জলাশয় থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে শীত ও খরা মৌসুমে এসব জলাশয় পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছোট মাছের আবাসস্থল। তাছাড়া বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাপে মাছের অতি আহরণ, মৎস্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ সরঞ্জামাদির ব্যবহার, নদীর নাব্যতা হ্রাস ইত্যাদি কারণে নদীতে মাছের উৎপাদন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেক দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায়। বাংলাদেশে স্বাদুপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১২টি চরম বিপন্ন, ২৮টি বিপন্ন এবং ১৪টি সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। স্বাদুপানির বিপন্ন ৫৪ প্রজাতি মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই ছোট মাছ যার ৫টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯টি সঙ্কটাপন্ন বলে সনাক্ত করা হয়েছে। প্লাবনভূমিতে সাধারণত ৫০-৬০ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে যার অধিকাংশই ছোট মাছের অন্তর্ভূক্ত। যেসব নদীতে কাঠা বা জাগের ব্যবহার বেশি সেসব নদীতে মাছের জীববৈচিত্র্যও বেশি। পক্ষান্তরে শুষ্ক মৌসুমে যে নদীর পানি কমে যায় এবং যেখানে কাঠার পরিমাণ কম সেসব নদীতে মাছের জীববৈচিত্র্যও কম পরিলক্ষিত হয়।
 
তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for দেশীয় ছোট মাছের জীববৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই