মাছচাষের ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে মাছ চাষকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. সনাতন পদ্ধতি (Traditional or extensive method)
  2. আধা-নিবিড় ( Improved traditional or semi-intensive method)
  3. নিবিড় (Intensive method)

 
সনাতন পদ্ধতি (Traditional or extensive method)

  • সাধারণত বড় ও অনিয়মিত আকারের জলাশয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলাশয়ের গভীরতা অনিয়মিত বা খুব কম বা খুব বেশী হয়ে থাকে।
  • চাষ ব্যবস্থাপনা সহজ ও সরল প্রকৃতির। তেমন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে।
  • পোনা সাধারণত প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে যা ঋতুর উপর নির্ভরশীল।
  • পোনার মজুদ ঘনত্ব কম থাকে যেমন হেক্টর প্রতি ৩-৫ হাজার।
  • সম্পূরক খাবার ও সার প্রয়োগ করা হয়না।
  • জোয়ার-ভাটার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত চিংড়ি ঘের ছাড়া অন্যান্য স্থানে পানি পরিবর্তনের কোন ব্যবস্থা থাকে না।
  • মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণও কম।
  • অল্প বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
  • পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।

 
আধা-নিবিড় ( Improved traditional or semi-intensive method)
 

  • সাধারণত মাঝারি আকারের আয়তাকার জলাশয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলাশয়ের গভীরতা নিয়মিত (খুব কম বা খুব বেশী নয় এমন) হয়ে থাকে।
  • জলাশয়ে সাধারণত পানি প্রবেশ ও বের করার দেয়ার ব্যবস্থা থাকে যা পানি পরিবর্তনের পরিবর্তে বরং পানির গভীরতা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  • পোনা সাধারণত হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
  • পোনার মজুদ ঘনত্ব মাঝারি হয়ে থাকে।
  • প্রাকৃতিক খাবার বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়। অনিয়মিত হলেও সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করা হয়।
  • চিংড়ির জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকে।
  • মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ সনাতন পদ্ধতির চেয়ে বেশী।
  • মধ্যম প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
  • পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় বললেই চলে।

 
 
নিবিড় (Intensive method)
 

  • তুলনামূলক ছোট আকারের আয়তাকার মাটির বা সিমেন্টের জলাশয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলাশয়ের গভীরতা নিয়মিত হয়ে থাকে।
  • জলাশয়ে সাধারণত পানি প্রবেশ ও বের করার দেয়ার ব্যবস্থা থাকে যা পানি পরিবর্তন ও পানির গভীরতা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  • পোনা সর্বদাই হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
  • পোনার মজুদ ঘনত্ব অধিক হয়ে থাকে।
  • প্রাকৃতিক খাবার বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়। নিয়মিতভাবে ফরমুলেটড সম্পূরক খাবারও প্রয়োগ করা হয়।
  • দ্রবীভূত অক্সিজেন বৃদ্ধির জন্য এরিয়েশনের ব্যবস্থা থাকে।
  • মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ অধিক।
  • অধিক প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় এবং অধীক লাভবান হওয়া যায়।
  • সঠিক ব্যবস্থাপনা মেনে না চললে পরিবেশের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে থাকে।

 
 
অন্যদিকে মাছচাষে প্রজাতির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে মাছ চাষকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা – 

  1. একক মাছচাষ
  2. মিশ্র মাছচাষ

 
একক মাছচাষ
একটি মাত্র প্রজাতির চাষ করলে তা একক মাছচাষ বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় একটি মাত্র প্রজাতির কোন একটি সুনির্দিষ্ট লিঙ্গের মাছচাষ করা হয়ে থাকে তখন তাকে মনোসেক্স মাছচাষ বলে।
 
 
মিশ্র মাছচাষ
 
একটিমাত্র প্রজাতির পরিবর্তে একাধিক প্রজাতির মাছ একত্রে চাষ করলে তাকে মিশ্র মাছচাষ (mixed fish culture) বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে যখন একাধিক প্রজাতির মাছ জলাশয়ের খাদ্য স্তর অনুসরণ করে চাষ করা হয় তখন তাকে যৌগিক মাছচাষ (composite fish culture) বলে। মিশ্র চাষে খাদ্য স্তর ভিত্তিক মজুদ অনুপাত বা ব্যবস্থাপনা মেনে চলার প্রয়োজন না হলেও যৌগিক মাছচাষে তা সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলা হয়।
 
 
তথ্যসূত্র: FAO, 2016

Answer for নিবিড়, আধা-নিবিড়, একক, মিশ্র মাছচাষের ইত্যাদি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই