কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা  

চাষ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পল্লী এলাকায় অসংখ্য পুকুর ও দীঘি রয়েছে, যেগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের উপযুক্ত এবং এসকল পুকুরে উন্নত সনাতন পদ্ধতি কিংবা আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। এ সকল পুকুরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্মতভাবে কৈ, শিং ও মাগুরের চাষ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাহ্যিকভাবে কৈ মাছের উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি ৬-৭ মেট্রিক টন এবং দেশী শিং ও মাগুরের উৎপাদনশীলতা ৫-৬ মেট্রিক টন।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছ আমাদের দেশে জনপ্রিয় ‘‘জিওল মাছ’’ হিসাবে পরিচিত। আবাসস্থল সংকোচন, পরিবেশগত বিপর্যয়, প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ ভরাট এবং খাল বিল পানিশূন্য হওয়ায় এ সকল মাছ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কেউই তেমন গুরুত্ব দেয়নি। চাষ পদ্ধতিতে এসব মাছ অন্তর্ভূক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। উচ্চ বাজারমূল্য, ব্যাপক চাহিদা ও অত্যন্ত লাভজনক হওয়া সত্বেও পোনার অপ্রতুলতার কারণে এ সকল মাছের চাষ আশানুরূপ প্রসার লাভ করছে না। তদুপরি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এসকল মাছ চাষে চাষীগণ বেশ উৎসাহি হয়ে উঠেছেন। প্রযুক্তিগত ও বিভিন্ন কলা কৌশল সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ প্রদান করতে পারলে এসকল মাছচাষ আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ লাভ করবে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৈ, শিং ও মাগুরের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ করা হচ্ছে যা উৎসাহজনক। কিন্তু এ সকল মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনার ওপর মৎস্য চাষিদের সঠিক ধারণা না থাকায় চাষিরা কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখিন হচ্ছে।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের গুরুত্ব

  • কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং খেতে খুবই সুস্বাদু।
  • অসুস্থ ও রোগ মুক্তির পর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য রোগীর পথ্য হিসেবে এ সকল মাছ সমাদৃত।
  • অল্প স্থানে অধিক ঘনত্বে এ সকল মাছ চাষ করা যায় বিধায় স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব।
  • অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এ সকল মাছ বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।
  • অন্যান্য মাছের তুলনায় এ সকল মাছের চাহিদা ও বাজার মূল্য অনেক বেশি।
  • এ সকল মাছে কম রোগ বালাই দেখা দেয় ও অধিক সহনশীলতা সম্পন্ন।
  • দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এ সকল মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
  • বাণিজ্যিকভাবে জিওল মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
  • আধা-নিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
  • জিওল মাছ চাষ করে দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের সুবিধা

  • ছোট-বড় যে কোন ধরণের জলাশয়ে এমনকি চৌবাচ্চায় বা খাঁচাতেও এ সকল মাছের চাষ করা যায়।
  • বাংলাদেশের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু এ সকল মাছ চাষের অত্যন্ত উপযোগী।
  • মৌসুমি পুকুর, বার্ষিক পুকুর, অগভীর জলাশয়েও এ সকল মাছ চাষ করা যায়।
  • স্বল্প গভীরতা সম্পন্ন পুকুরে অধিক ঘনত্বে সহজেই চাষ করা যায়।
  • বিরূপ পরিবেশের পানিতে এরা স্বচ্ছন্দে^ বসবাস করতে পারে।
  • কৈ মাছ ও শিং মাছ একক চাষে এবং মাগুর মিশ্রচাষে চাষ উপযোগী।
  • কৈ মাছ ৪ মাসে এবং শিং ও মাগুর মাছ ৭-৮ মাসে খাবার উপযোগী ও বাজারজাত করা যায়।
  • কৈ, শিং ও মাগুর মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
  • শিং ও মাগুর মাছ রুইজাতীয় মাছের সাথে চাষ করেও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা যায়।
  • উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগে চাষ করলে এসকল মাছে রোগ হওয়া সম্ভাবনা কম থাকে।
  • অধিক ঘনত্বের চাষের মাধ্যমে সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
  • জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করার সুযোগ থাকায় এসকল মাছের চাহিদা বেশি থাকে।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ পদ্ধতি
কৈ, শিং ও মাগুর মাছের একক চাষ এখনও ব্যাপক প্রচলন হয় নাই। চাষির অভিজ্ঞতা ও আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এসকল মাছ দুইভাবে চাষ করা যেতে পারে। অন্য যেকোন মাছ চাষের সাথী ফসল হিসাবে কৈ, শিং বা মাগুরের যেকোন একটি নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের পুকুরে একর প্রতি ২০০০-৫০০০টি জিওল মাছের পোনা ছাড়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে এদের খাবারের বিষয়ে পৃথকভাবে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়ে না। রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের অনুরুপ পাঙ্গাস মাছের সাথেও সাথী ফসল হিসাবে জিওল মাছের যে কোন একটি প্রজাতি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও এদের খাবারের বিষয়ে পৃথকভাবে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমানে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং চাষিগণ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় অনেক চাষি এসকল মাছ বিশেষ করে কৈ এবং শিং এর একক চাষ দেশের অনেক জায়গায় প্রসার লাভ করেছে। এসকল মাছের আধা-নিবিড় একক চাষের জন্য নিম্নেরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা সংগ্রহ ও প্রতিপালন

কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত আকারের পোনা সহজলভ্য নয় এবং পাওয়া গেলেও তুলনামূলকভাবে দাম বেশি। সেজন্য সময়মত উপযুক্ত আকারের পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য ছোট আকারের পোনা সংগ্রহ করে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা নার্সারি পুকুরে ২০-২১ দিন প্রতিপালনের পর চাষের পুকুরে মজুদ করা উত্তম। নার্সারি পুকুরে যখন কৈ মাছের পোনাগুলো ২.৫- ৩.০ সেমি. আকারের হয় তখন গড় ওজন করে পোনা মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হয়। শিং মাছের পোনার বয়স নার্সারি পুকুরে ৩০-৪০ দিন হলে তা মজুদ পুকুরে স্থানান্তরের যোগ্য হয়। অন্যদিকে মাগুর মাছের পোনার বয়স ২৫-৩০ দিন হলে এদের মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে। যে কোন উৎস থেকে সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। উৎসস্থল থেকে মজুদ পুকুরের দুরত্ব যতকম হয় বিশেষ করে কৈ মাছের পোনার মৃত্যু হার তত কম হবে। অধিক দুরত্বে পরিবহনের ক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশি হয়। পক্ষান্তরে শিং ও মাগুর মাছ তুলনামূলকভাবে বেশি দুরত্বে পরিবহন করা সহজ।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা পরিবহন রুই জাতীয় পোনা পরিবহনের মত হলেও একটু ভিন্নতা রয়েছে। তারা কাটাযুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিং&ও মাগুরের ছোট পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন করাই উত্তম।

নার্সারি পুকুর প্রস্ত্ততিঃ
কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের জন্য ৩.০ হতে ৫.০ সেমি. আকারের পোনার অতন্ত্য উপযোগী। উল্লেখিত আকারের পোনা সহজে পাওয়া যায় না বিধায় নিজস্ব নার্সারীতে পোনা প্রতিপালন করে নেয়া যেতে পারে, ফলে সঠিক সময়ে সঠিক আকারের পোনা প্রাপ্তিতে যেমন সুবিধা হয় তেমনি খরচও পড়ে কম। এসব মাছের ১০০০০টি ধানী পোনা মজুদের জন্য ১০ শতকের একটি নার্সারি পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে। অন্যান্য মাছের ধানী পোনা প্রতিপালনের অনুরুপ নার্সারি পুকুর প্রস্তুত সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য যথারীতি পুকুর সেচ প্রদানকরে শুকিয়ে পরিমান মত চুন ও জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

নার্সারি পুকুরে খাদ্য প্রয়োগঃ
পুকুরে ধানী পোনা ছাড়ার পর হতে পোনার ওজনের ৩ ভাগের ১ ভাগ হারে দিনে ৩ বারে ভাল মানের নার্সারি খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। ধানী পোনা ছাড়ার ২৫-৩০ দিন চাষের পর প্রজাতি ভেদে পোনা ৩.০-৫.০ সেমি. আকারে পরিণত হয়।

মজুদ পুকুর নির্বাচনঃ
উচ্চ ঘনত্বে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা মজুদের জন্য পুকুর নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সহজে পানি সরবরাহ এবং নিষ্কাশন করা যায় এবং তলদেশে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম এরূপ বেলে,
বেলে-দোআঁশ মাটির পুকুর এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে। নিজস্ব উর্বরা শক্তি কম আছে এরুপ পুকুরের পানি দুষণ সমস্যা কম হয়ে থাকে। বিশেষ করে ধান ক্ষেতকে অগভীর জলাশয়ে রুপান্তর করে বর্তমানে যে মাছ চাষ করা হচ্ছে সে ধরণের জলাশয় নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে পুকুরটিতে যাতায়াত ব্যবস্থা উত্তম হতে হবে এবং পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবাহের জন্য খোলামেলা হতে হবে।

মজুদ পুকুর প্রস্ত্ততিঃ
অন্যান্য মাছ চাষের মতই পুকুর প্রস্ত্তত করতে হবে তবে এ সকল মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর শুকালে সবচেয়ে ভালো হয়, তবে পুকুর সেচ দিয়ে মৎস্য শূন্য করে নিলেও চলবে। শতকে ১-২ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে পুকুরের তলদেশের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। শুকানো পুকুর হলে চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

পোনা মজুদঃ
এ কথা সত্য যে, চাষের উত্তম ফলাফল নির্ভর করে ভাল মানের বীজের ওপর। তবে কৌলিতাত্ত্বিকভাবে বিশুদ্ধ পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নিজের নার্সারি পুকুরে পোনা উৎপাদন না করলে পরিচিত বিশ্বস্থ নির্ভরযোগ্য পোনা উৎপাদনকারীর নিকট হতে পোনা সংগ্রহ করাই উত্তম। পোনা ছাড়ার ঘনত্ব সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে খামারীর মাছ চাষের অভিজ্ঞতা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, মাছ চাষের আগ্রহ, পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণ এবং সর্বোপরি চাষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর। বাণিজ্যিক ভাবে কৈ, শিং মাগুর মাছের একক চাষের জন্য পুকুর প্রস্ত্ততের ৪-৫ দিন পর নিম্ন হারে পোনা ছাড়া যেতে পারে।

কৈ মাছের একক মজুদ হার
মডেল-১: প্রতি শতকে ২৫০-৩০০ টি
মডেল-২ প্রতি শতকে ৪০০-৫০০ টি (পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে)

পুকুরের পানির প্রতিবেশ (Ecosystem) ভালো রাখার জন্য কৈ মাছের সাথে শতকে ২-৩ টি সিলভার কার্পের ৬-৭ইঞ্চি আকারের পোনা ছাড়া যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, কৈ মাছের সাথে সাথি ফসল হিসাবে প্রতি শতকে দেশী মাগুর ২০টি অথবা শিং ১০টি মজুদ করা যেতে পারে।

শিং মাছের মজুদ হার
মডেল-১: প্রতি শতকে ৩০০-৪০০ টি
মডেল-২ প্রতি শতকে ৪০০-৫০০ টি (পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে)
মডেল-৩: প্রতি শতকে শিং ২০০টি + কৈ বা পাঙ্গাস ১০০টি (পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে)
মডেল-৪ প্রতি শতকে শিং ৫০টি + রুই জাতীয় মাছ ৪০টি
 
মাগুর মাছের মজুদ হার
মডেল-১: প্রতি শতকে ১৫০-২০০ টি
মডেল-২ প্রতি শতকে ২৫০-৩০০ টি (পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে)
মডেল-৩: প্রতি শতকে মাগুর ১৫০টি + কৈ বা পাঙ্গাস ১০০টি (পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে)
মডেল-৪ প্রতি শতকে মাগুর ৫০টি + রুই জাতীয় মাছ ৪০টি
 
পোনা মজুদকালীন করণীয়ঃ
মজুদ কালীন সময়ে পোনার মৃত্যু হার কমানোর জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে;

  1. পরিবহন জনিত কারণে পোনার শরীরে ক্ষত হতে পারে, সে জন্য পোনা ছাড়ার পূর্বে ১ পিপিএম হারে পটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট পানিতে গোসল করিয়ে পোনা ছাড়তে হবে।
  2. যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ১০-১২ ঘন্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে।

পোনা ছাড়ার সময়ঃ
ঠান্ডা আবহাওয়ায় দিনের যে কোন সময়ে পোনা ছাড়া যেতে পারে। তবে সকাল অথবা বিকালে পোনা ছাড়া উত্তম। দুপুরের রোদে, ভ্যাপসা আবহাওয়ায়, অবিরাম বৃষ্টির সময়ে পুকুরে পোনা না ছাড়াই উচিত। পুকুরে পোনা মজুদের পর ১-২ দিন পুকুরে পোনার মৃত্যু হার পর্যবেক্ষণ করা দরকার। পোনা মৃত্যু হার বেশী হলে সম পরিমাণ পোনা ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 
খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
মাছের অধিক উৎপাদন প্রাপ্তির জন্য ভালো বীজের অর্থাৎ পোনার যেমন প্রয়োজন তেমনই ভালোমানের খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান জরুরী। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় খাদ্যে নির্ধারিত মাত্রায় সকল পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন। মাছ তার দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্যে পুকুরে প্রাপ্ত খাদ্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বাণ্যিজিকভাবে লাভজনক উপায়ে মাছচাষ করতে গেলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়াতে হবে। কৈ মাছের এরুপ চাষের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। নিবিড় মাছচাষে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সূষম দানাদার খাদ্য প্রয়োগ আবশ্যক। সূষম খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্খিত উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এছাড়া সুষম খাবার প্রয়োগে উৎপাদিত মাছের Condition Factor সমুন্নত থাকে।

খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের উৎসঃ
মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রস্ত্ততে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের জন্য বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাদ্যের এ সকল উপকরণ প্রধানতঃ প্রাণিজাত এবং উদ্ভিদজাত উৎস থেকে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মাছের খাদ্য প্রস্ত্ততে বহুলভাবে ব্যবহৃত চালের মিহিকুড়া, গমের ভুসি, চালের খুদ, আটা, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, সোয়াবিন মিল, ভুট্টা চূর্ণ প্রভৃতি উদ্ভিদজাত এবং ফিশমিল, মাংস-হাড়চুর্ণ, গবাদিপশুর রক্ত ইত্যাদি প্রাণিজাত উপকরণ। মাছের দেহ বৃদ্ধির জন্য আমিষের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছের খাদ্যে আমিষের পাশাপাশি পরিমাণমত শর্করা, চর্বি বা ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজজাতীয় পুষ্টি উপাদান পরিমাণ মত অবশ্যই থাকতে হবে। সাধারণত কৈ, মাগুর মাছের খাদ্যে ৩০-৩৫% আমিষ থাকা প্রয়োজন। কারণ এসকল মাছ প্রাণীঝ আমিষ উৎসজাত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত। সচরাচর ব্যবহৃত কিছু খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান নিচের দেয়া হলো-

উপাদান পুষ্টিমান
আমিষ শর্করা চর্বি
চালের কুঁড়া ১১.৮৮ ৪৪.৪২ ১০.৪৫
গমের ভুসি ১৪.৫৭ ৬৬.৩৬ ৪.৪৩
সরিষার খৈল ৩০.৩৩ ৩৪.৩৮ ১৩.৪৪
তিলের খৈল ২৭.২০ ৫৪.৯৭ ১৩.১৮
ফিশমিল-এ গ্রেড ৫৬.৬১ ৩.৭৪ ১১.২২
ব্লাড মিল ৬৩.১৫ ১৫.৫৯ ০.৫৬

খাদ্য উপকরণ নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়ঃ

আমাদের অধিকাংশ মৎস্য চাষি সম্পূরক খাবার হিসাবে প্রধানত সরিষার খৈল, চাউলের কুঁড়া ও গমের ভুসি ব্যবহার করে। এ ছাড়াও অনেক মাছচাষি এমন কিছু খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করেন, যেগুলো আর্থিক ভাবে লাভজনক নয়, এমনকি সেগুলো অনেক সময় পুকুরের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। যেমনঃ ধানের তুষ বা কুঁড়া মাছের ফুলকায় আটকিয়ে শ্বাসরোধ করে মাছের মৃত্যুর কারণ ঘটায়। খামারের নিজস্ব উদ্যোগে সম্পুরক খাদ্য প্রস্ত্তত করলে প্রজতিভিত্তিক খাদ্যের পুষ্টিগুণ বিচারে খাদ্য তৈরি করা উত্তম। পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো মাছের অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা। সে কারণে মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য উপকরণ নির্বাচনের সময় বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত যা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-

  • স্থানীয় ভাবে উপকরণসমূহের প্রাচুর্যতা
  • উপকরণের পুষ্টিমান
  • উপকরণের Comparative price
  • মাছের খাদ্যাভ্যাস বা পুষ্টি চাহিদা
  • চাষির আর্থিক সঙ্গতি
  • উচ্চ খাদ্য পরিবর্তন হার
  • উপকরণের আকার
  • উপকরণ সংরক্ষণের মেয়াদ

খাদ্যের পুষ্টিমান নির্ধারণঃ
খাদ্য প্রস্ত্ততির জন্য নির্বাচিত উপকরণসমূহের পুষ্টি উপাদান আমিষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। এ জন্য মাছের খাদ্য তৈরির সময় শুধুমাত্র আমিষের মাত্রা হিসাব করা হয়। মাছের খাদ্যে আমিষের মাত্রা নিরুপণের জন্য কৌনিক সমীকরণ পদ্ধতি বহুল প্রচলিত। এই পদ্ধতিটি পিয়ারসন্স বর্গ পদ্ধতি (Pearson’s Square Method) নামে পরিচিত।
 
পিয়ারসন্স বর্গ পদ্ধতিঃ
ধরা যাক, ফিসমিলে ৬০% ও চালের কূঁড়া ৮% আমিষ আছে। এ দুইটি উপকরণ ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করতে হবে এবং প্রস্ত্ততকৃত খাদ্যে আমিষের মাত্রা হবে ৩০%। পিয়ারসন্স বর্গ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের ফিসমিল ও চালের কুঁড়ার অন্তর্ভূক্তির মাত্রা নির্নয় করতে হবে।

Pearson's Square Method

এই পদ্ধতিতে (চিত্রানুসারে) –

  • প্রথমেই উপরের মত করে একটি বর্গ আঁকতে হবে এবং প্রত্যাশিত আমিষের মাত্রা (৩০%) বর্গের মাঝখানে লিখতে হবে।
  • বর্গের বাম পার্শ্বে দু’টি উপকরণের নাম তাদের আমিষের মাত্রাসহ লিখতে হবে। যেমন- ফিসমিল ৬০% ও চালের কুঁড়া ৮%
  • প্রত্যাশিত আমিষের মাত্রা থেকে উপকরণের আমিষের মাত্রা বিয়োগ করতে হবে এবং বিয়োগ ফল বর্গের উপকরণের বিপরীত কোণে অর্থাৎ বর্গের কর্ণের শেষে লিখতে হবে। যেমন- (৩০-৮) = ২২ ও (৩০-৬০) = – ৩০
  • বিয়োগ ফল ঋনাত্মক হলে তা ধনাত্মক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যেমন, – ৩০ শুধুমাত্র ৩০ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে
  • বর্গের ডানদিকে সংখ্যাগুলোকে যোগ করতে হবে। যেমন- ৩০+২২ = ৫২
  • অতঃপর ডান দিকের যোগফল দিয়ে নিচের পদ্ধতি অনুসরন করে শতকরা হার বের করতে হবে।

এখানে ফিসমিল ও চালের কুঁড়ার অন্তর্ভূক্তির মাত্রা-
ফিসমিল = ২২/৫২ x১০০ = ৪২.৩১ % [এখানে, ৩০+২২=৫২]
চালের কুঁড়া = ৩০/৫২x১০০ = ৫৭.৬৯ % [এখানে, ৩০+২২=৫২]
অর্থাৎ ৩০ % আমিষ সমৃদ্ধ প্রতি ১০০ কেজি খাবার তৈরিতে ফিশমিল ৪২.৩১ কেজি এবং চালের কুঁড়া ৫৭.৬৯ কেজি মেশাতে হবে।
 
এখন, প্রত্যাশিত আমিষের মাত্রা সঠিক আছে কিনা, তা সহজেই যাচাই করে নেয়া যায়। যেমন-
চালের কুঁড়া থেকে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণ = ৫৭.৬৯ x ৮ / ১০০ = ৪.৬১ %
অর্থাৎ মোট আমিষের পরিমাণ = ২৫.৩৯ % + ৪.৬১ % = ৩০ %

সম্পূরক খাদ্য তৈরীঃ

সে সকল দ্রব্য মাছকে খাওয়ানোর জন্য বাহির থেকে পুকুরে সরবরাহ করা হয়, যাহা মাছের ক্ষয়পূরণ, দৈহিক বৃদ্ধি সাধনে কাজ করে এবং মাছের রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন সক্ষমতা লাভে সহায়ক ভুমিকা রাখে, সেসকল দ্রব্যকে মাছের সম্পুরক খাদ্য বলা হয়। সম্পুরক খাবার দুইভাবে প্রস্ত্তত করা যেতে পারে।

ক) বাণিজ্যিক খাদ্যঃ বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাবার বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্তত করার জন্য বহু খাদ্য মিল স্থাপিত হয়েছে। এসকল কারখানায় মাছের বয়সের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মানের খাবার প্রস্ত্তত করা হচ্ছে। মাছ চাষিগণ তার চাহিদা অনুযায়ী বাজার থেকে বিভিন্ন পুষ্টিমানের ও দামের খাদ্য সংগ্রহ করে সহজেই পুকুরে প্রয়োগ করতে পারেন। কারখানায় প্রস্ত্তত পিলেট খাবার পানিতে সহজে গলে না, তাতে খাদ্যের অপচয় কম হয় এবং পানি সহজে নষ্ট হয় না। বানিজ্যিকভাবে পিলেট খাবারে মাছের প্রজাতি বয়সভেদে পুষ্টি উপাদান আনুপাতিক হারে সংশ্লেষ থাকায় খাদ্য পরিবর্তন হার (Food Conversion Ratio) বেশি হয় অর্থাৎ তুলনামূলক স্বল্প খাদ্য প্রয়োগে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।

খ) খামারে প্রস্ত্ততকৃত সম্পূরক খাদ্যঃ বাজারের পিলেট খাবারের পুষ্টিমান ঘোষনার সাথে সব সময় ঠিক থাকে না। মাছের বর্ধন ভাল পেতে হলে প্রয়োজনীয় খাদ্যে উপকরণসমূহ বাজার থেকে কিনে নিজস্ব পিলেট মেশিন দ্বারা খাদ্য তৈরি করা সবচেয়ে নিরাপদ। খামারে দুভাবে খাদ্য প্রস্ত্তত করা যায়। বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উপকরণ প্রয়োজন মাফিক একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নিজ হাতেই খাদ্য প্রস্ত্তত করে পুকুরে প্রয়োগ করা যায় অথবা খাদ্য প্রস্ত্তত মেশিন এর সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ পরিমাণমত মিশিয়ে চাহিদা অণুযায়ী দানাদার সম্পুরক খাদ্য তৈরি করা যায়। খামারে প্রস্ত্তত সম্পুরক খাদ্য টাটকা (Fresh) হওয়ায় মাছের খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া খাবারে ছত্রাক, মোল্ড বা অন্যান্য পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। কৃত্রিম দানাদার খাবারে ১০% এর অধিক জ্বলীয় অংশ থাকলে ছত্রাক বা মোল্ড দ্বারা সক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাছের কাঙ্খিত উৎপাদন নিশ্চিতকল্পে খাদ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধিকন্তু বানিজ্যিক মৎস্য চাষে ৭০-৭৫% ব্যয়ই খাদ্য খাতে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের জন্য নিম্নহারে খাদ্যের উপকরণ মিশিয়ে স্বল্প মূল্যে কিন্তু ভালো মানের খাদ্য প্রস্ত্তত করা যেতে পারে।

ক্র. নং উপকরণের বিবরণ শতকরা হার
ফিশমিল ২০
সোয়বিন চূর্ণ
অটোকুড়া ৩০
ভুট্টাচূর্ণ
গমের ভুসি ১২
চিটাগুড়/রাব
সরিষার খৈল ২০
বিটামিন প্রিমিক্স ১ গ্রাম/কেজি

খাদ্য প্রস্ত্ততের ২৪ খন্টা পূর্বেই সরিষার খৈল পরিমাণমত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। অতপর অন্য সকল উপকরণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে এমন ভাবে পানি মিশাতে হবে যেন খাবার অনেকটা শুকনা খাবারের মত হয়।

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রাঃ
 
মাছের খাদ্য গ্রহণ মাত্রা নির্ভর করে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর অনুকূল অবস্থার ওপর। তাপমাত্রা বাড়লে মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের হার বেড়ে যায়। ফলে খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্য চাহিদাও কমে যায়। মাছের খাদ্য গ্রহণ ও বিপাকের জন্য তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। যেমনঃ প্রতি তাপমাত্রা ১০০সে. বৃদ্ধির সাথে মাছের খাদ্য গ্রহণ মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তদ্রূপ পানির তাপমাত্রা পানির ১০০সে. কমে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণ স্পৃহা অর্ধেকে নেমে আসে। পিএইচ ৭.০-৮.৫ ও পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তা’ছাড়া ছোট অবস্থায় মাছ তুলনামূলক বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের দৈহিক ওজনের সাথে খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা

মাছের গড় ওজন (গ্রাম) দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ (%)
১-৩ ১৫-২০
৪-১০ ১২-১৫
১১-৫০ ৮-১০
৫১-১০০ ৫-৭
>১০১ ৩-৫

 
নমুনায়ন ও খাদ্য সমন্বয়ঃ

নমুনাকরণের মাধ্যমে পুকুরের মোট মাছের জীবভর (Biomass) হিসাব করে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি ঝাঁকি জাল ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মজুদ মাছের ৫-১০% নমুনা সংগ্রহ করা উত্তম। ধৃত মাছের গড় ওজন হিসাব করে এবং মাছের বাঁচার হার ৯০% বিবেচনায় এনে মোট জীবভর নির্ণয় করতে হবে। কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার সমান ৩ ভাগ করে সকাল, দুপুর ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের আকার ৩০ গ্রাম হলে মোট খাদ্যকে দুই ভাগ করে সকাল ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর মাছের নমুনায়ন করে মাছের জীবভর পরিমাপ করে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা সমন্বয় করতে হবে।

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

নিম্নরূপে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে

  • সমস্ত পুকুরে সমান ভাবে ছিটিয়ে
  • নির্ধারিত স্থানে
  • খাদ্যদানীতে প্রয়োগ করা। খাদ্যদানীর সংখ্যা পুকুরে মজুদকৃত মাছের সংখ্যা ও আকারের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করতে হবে।

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের সময় নিম্নে উল্লেখিত বিষয়াবলী অনুসরণ করা প্রয়োজনঃ-

  • খাদ্য প্রয়োগের জন্য সুবিধামত যে কোন একটি বা দুটির মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান সকল পদ্ধতির কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
  • খাদ্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পরিমিত পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে
  • পানি অতিরিক্ত সবুজ বা দূষিত হয়ে পড়লে বা বৃষ্টি হলে খাদ্য দেয়া কমাতে হবে
  • মাছ যে কোন কারণে পিড়ন (Stress) অবস্থার সম্মূখীন সৃষ্টি হলে খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় খাদ্য অপচয় হয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করবে।

 
কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনাঃ
কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত হারে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করায় মাছের মলমুত্র এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট পানিতে পঁচে পানির নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব পদার্থের উপস্থিতি বেড়ে যায় ফলে মাছ নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখিন হয়ে থাকে। অধিক পঁচনশীল জৈব দ্রব্য পুকুরে প্রয়োগ করাই সমীচীন। পুকুরে জৈব উপাদানের বৃদ্ধির কারণে প্ল্যাঙ্কটনিক ব্লুমের সৃষ্টি হতে পারে এবং এক পর্যায়ে প্ল্যাঙ্কটনের যথাযথ পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং প্ল্যাঙ্কটনের অপমৃত্যু ঘটায়, ফলশ্রুতিতে পুকুরের পানির সার্বিক পরিবেশের মারাত্বক বিপর্যয় ঘটে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ পরিবেশে প্রথমে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার কমে যায়, মাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং এক পর্যায়ে বিপুল হারে মাছ মারা যায়। এরূপ পরিবেশ যাতে না হয় সেজন্যে পানির রং এর অবস্থা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে পানি দেয়া যেতে পারে, অথবা পুকুর থেকে কিছু পানি বের করে দিয়ে পুনরায় পানি সংযোগ করা যেতে পারে। এসব মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য সময়ে সময়ে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে খাদ্য লবণ ও চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো রাখার জন্য বর্তমানে বাজারে নানা ধরণের জিওলাইট ও অনুজীব নাশক পাওয়া যায়, যাহা প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

 
কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষে অন্যান্য ঝুঁকিঃ
এসব মাছ চাষে ঋতুভিত্তিক কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থা হুমকির সম্মূখে পড়তে পারে।

ক) বর্ষাকালীন ঝুঁকিঃ বর্ষাকালীন অতিবৃষ্টি বা বন্যায় পুকুরের পাঁড় ভেসে গিয়ে চাষকৃত মাছ বেরিয়ে যেতে পারে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পরিপক্ক কৈ ও মাগুর মাছ পানির স্রোতের ওপর ভর করে পুকুরের পাড় বেয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এ কারণে পুকুরের পাড়ে চারিদিকে বাঁশের বানা বা বেড়া অথবা প্লাস্টিক নেটের সাহায্যে ১.৫ ফুট উচু করে বেষ্টনির ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকিঃ শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে পানির গভীরতা কমে পানির ঘনত্ব বেড়ে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি বাঁধা গ্রস্ত হতে পারে। এতে পানির তাপমাত্রা বেড়ে পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। পানি সরবরাহের মাধ্যমে পানির গভীরতা বাড়িয়ে পুকুরের প্রতিবেশ সহায়ক করতে হবে।
গ) শীতকালীন ঝুঁকিঃ শীতে (১৫­­০ সে: তাপের নীচে) বিশেষ করে কৈ মাছ চাষে রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি হয়, সে জন্য শীতের ২-৩ মাস কৈ মাছ চাষ না করাই ভাল। তবে এ সময়ে মাছ বা পোনা সংরক্ষণের জন্য পানির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখার নিমিত্ত প্রতি দিন ভোরে গভীর নলকূপ-এর পানি দেয়া যেতে পারে।
ঘ) ক্ষতিকর গ্যাস: খাদ্যের অবশিষ্টাংশ এবং মাছের মলমূত্রের কারণে পুকুরের তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস জমে বুদবুদের সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজটি হরত্মা টেনেও করা যায়। এক্ষেত্রে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতির সমস্যা প্রকট আকাররূপে দেখা দিলে জিওনেক্স প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
ঙ) মাছ চুরিঃ এটা একটি সাধারণ সমস্যা বা সামাজিক ঝুঁকি। পুকুরের মাছ বড় হলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বড় মাছগুলো আহরণ করলে চzুর হওয়ার সম্বাবনা কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ চাষিকে সমাজের অন্যদের সাথে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব এড়াতে হবে। উৎপাদিত মাছ থেকে পুকুরের পার্শ্বে বসবাসকারীদের সৌজন্যমূলক কিছু মাছ বিতরণ করা যেতে পারে।
 
মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণঃ
মাছ আহরণঃ মাছ চাষের পদ্ধতি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে প্রজাতি ভেদে চাষের ১০০-১৪০ দিনে মাছ বাজারজাত করণের উপযোগী হয় এবং এসময়ে মাছের গড় ওজন ৪০-১১০ গ্রাম হয়ে থাকে। মাছের আকার, ওজন, মাছের বাজার দর, চুরিসহ অন্যান্য ঝুঁকি এবং বিশেষ করে পুকুরে মাছের ধারণক্ষমতা (Carrying Capacity) বিবেচনায় রেখে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজারজাতকরণের নিমিত্ত আহরিত মাছের গুণগত মান অধিক সময় ভালো রাখার জন্য মাছ ধরার ১ দিন পূর্বে খাবার প্রয়োগ বন্ধ রাখা উচিত। মাছ চাষের পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ থাকলে মাছ বাজারজাতকরণের পূর্বের দিন জাল টেনে মাছ ধরে ছেড়ে দিতে হবে, এর ফলে বাজারজাত করার সময় মাছের মৃত্যু হার কমে যাবে।

মাছের বাজার দরঃ মাছের বাজার দর বিভিন্ন এলাকায় ও ঋতুতে কম বেশি হয়ে থাকে। বাজার চাহিদা ও মূল্যের প্রতি খেয়াল রেখে মাছ বাজারজাত করা উচিত। মাছের বাজার দর ভালো পাওয়ার জন্য মাছ ধরার আগেই দেশের বড় বাজারসমূহে সম্ভব হলে রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান বা মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় যোগাযোগ স্থাপন করে বাজার দর যাচাই এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জীবন্ত মাছ ছোট বড় বাছাই করে (Grading) বাজারসমূহে পাঠানোর ব্যবস্থা্ করা গেলে অধিক মূল্য পাওয়া যায়।

আহরণ পূর্বে করণীয় কাজঃ
মাছ আহরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে নিম্নে উল্লেখিত বিয়ষসমূহ বিবেচনা করা প্রয়োজনঃ

  • বাজার দর যাচাই
  • ক্রেতা নির্ধারণ
  • জেলে ও জালের ব্যবস্থা
  • পরিবহন ব্যবস্থা
  • পুকুরে বিদ্যমান জলজ আগাছা ও ডালপালা (যদি থাকে) অপসারণ
  • মাছ পরিমাপের জন্য উপযুক্ত পরিমাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা
  • মাছ জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করার জন্য কন্টেনার (ড্রাম) এর ব্যবস্থা
  • মাছ আহরণ করে প্রাথমিক ভাবে জীবন্ত সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নেটের হাফা সংগ্রহ
  • মাছ প্যাকিং ও পরিবহনকালীন সংরক্ষণের জন্য পাত্র এবং বরফ সংগ্রহ ।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের আর্থিক বিশ্লেষণঃ
(ক) এক একরের একটি পুকুরে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে কৈ মাছ চাষে সম্ভাব্য উৎপাদন ও আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ-

(ক) এক একরের একটি পুকুরে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে কৈ মাছ চাষে সম্ভাব্য উৎপাদন ও আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ-

ক্র. নং বিবরণ টাকার পরিমাণ
ক) ব্যয়ের হিসাব
১। পুকুর সংস্কার/ভাড়া (৬ মাসের জন্য) ১০,০০০.০০
২। কৈ মাছের পোনা ৪০,০০০টি (নার্সারিতে লালনের পর ৩০,০০০টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য) ৬০,০০০.০০
৩। সিলভার/কাতল ১৫০টি (৬-৭ ইঞ্চি আকারের) ১৫০০.০০
৪। চুন ২৫০ কেজি ৪০০০.০০
৫। মাছের খাদ্য (প্রায় ৩৫০০ কেজি; FCR=১.০০ঃ ২.১৯) ৮৭,৫০০.০০
৬। পারিবারিক শ্রম, শ্রমিক মজুরী, অন্যান্য ১০,০০০.০০
৭। পরিবহন খরচ ১০,০০০.০০
                     মোট খরচ (ক) ১,৮৩,০০০.০০
খ) আয়ের হিসাব
১। কৈ মাছ বিক্রয় (বাঁচার হার ৮০% এবং ১৫টিতে কেজি ধরে এবং বাজার দর @ ১৫০/- হিসাব) ২,৪০,০০০.০০
২। সিলভার/কাতল মাছ বিক্রয় ২০০ কেজি (প্রায়) ১১,০০০.০০
                     মোট আয় (খ) ২,৫১,০০০.০০
নিট লাভ =(খ-ক) = (২,৫১,০০০.০০ – ১,৮৩,০০০.০০)= ৬৮,০০০.০০ টাকা

 

(খ) এক একরের একটি পুকুরে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষে সম্ভাব্য উৎপাদন ও আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ-

ক্র. নং বিবরণ টাকার পরিমাণ
ক) ব্যয়ের হিসাব
১। পুকুর সংস্কার/ভাড়া (৬ মাসের জন্য) ১০,০০০.০০
২। শিং ও কৈ মাছের পোনা ৪০,০০০টি {নার্সারিতে লালনের পর ৩০,০০০টি (শিং ২০,০০০টি + কৈ ১০,০০০ টি) প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য) ৭০,০০০.০০
৩। সিলভার/কাতল ১০০টি (৬-৭ ইঞ্চি আকারের) ১,০০০.০০
৪। চুন ২৫০ কেজি ৪,০০০.০০
৫। মাছের খাদ্য (প্রায় ৩০০০ কেজি; FCR=১.০০ঃ ২.৭৪) ৭৫,০০০.০০
৬। পারিবারিক শ্রম, শ্রমিক মজুরী, অন্যান্য ২০,০০০.০০
৭। পরিবহন খরচ ১০,০০০.০০
                     মোট খরচ (ক) ১,৯০,০০০.০০
খ) আয়ের হিসাব
১। শিং মাছ বিক্রয় (বাঁচার হার ৭০% এবং ২৫টিতে কেজি ধরে এবং বাজার দর @ ৩০০/- হিসাব) ১,৯৬,০০০.০০
২। কৈ মাছ বিক্রয় (বাঁচার হার ৮০%   এবং ১৫টিতে কেজি ধরে এবং বাজার দর @ ১৫০/- হিসাব) ৮০,০০০.০০
৩। সিলভার/কাতলা মাছ বিক্রয় (১০০ কেজি) ৫,৫০০.০০
                     মোট আয় (খ) ২,৮১,৫০০.০০
নিট লাভ =(খ-ক) = (২,৮১,৫০০.০০ – ১,৯০,০০০.০০)= ৯১,৫০০.০০ টাকা

 

(গ) এক একরের একটি পুকুরে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে মাগুর মাছ চাষে সম্ভাব্য উৎপাদন ও আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ-

ক) ব্যয়ের হিসাব

ক্র. নং বিবরণ টাকার পরিমাণ
১। পুকুর সংস্কার/ভাড়া (৬ মাসের জন্য) ১০,০০০.০০
২। মাগুর মাছের পোনা ৩৫,০০০টি (নার্সারিতে লালনের পর ২৫,০০০টি (মাগুর ১৫,০০০টি + কৈ ১০,০০০ টি) প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য) ৫০,০০০.০০
৩। সিলভার/কাতল ১০০টি (৬-৭ ইঞ্চি আকারের) ১,০০০.০০
৪। চুন ২৫০ কেজি ৪,০০০.০০
৫। মাছের খাদ্য (প্রায় ৩০০০ কেজি; FCR=১.০০ঃ ২.৩৪) ৭৫,০০০.০০
৬। পারিবারিক শ্রম, শ্রমিক মজুরী, অন্যান্য ২০,০০০.০০
৭। পরিবহন খরচ ১০,০০০.০০
                     মোট খরচ (ক) ১,৭০,০০০.০০

খ) আয়ের হিসাব

ক্র. নং বিবরণ টাকার পরিমাণ
০১ মাগুর মাছ বিক্রয় (বাঁচার হার ৭০% এবং ১৪টিতে কেজি ধরে এবং বাজার দর @ ২০০/- হিসাব) ১,৩৭,৫০০.০০
০২ কৈ মাছ বিক্রয় (বাঁচার হার ৮০% এবং ১৫টিতে কেজি ধরে এবং বাজার দর @ ১৫০/- হিসাব) ৮০,০০০.০০
০৩ সিলভার/কাতল মাছ বিক্রয় (১০০ কেজি) ৫,৫০০.০০
                     মোট আয় (খ) ২,২৩,০০০.০০
নিট লাভ =() = (,২৩,০০০.০০,৭০,০০০.০০) = ৫৩,০০০.০০ টাকা

 

উপসংহারঃ

একবার কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের পর ঐ একই পুকুরে মাছ আহরণের পরপরই আবার এসকল মাছ চাষ করা উচিত নয়। এসব মাছ চাষের পর পর্যায়ক্রমে (Crop Rotation) অন্য মাছ যেমন তেলাপিয়া বা রুইজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ করা যেতে পারে। চাষের পুকুরের তলায় জমে থাকা কালো কাদা (Sludge) তুলে সব্জির ক্ষেতে, ফল বা ফুলের বাগানে দেয়া যেতে পারে। চীন দেশে Ecological Farming Concept-এ Sludge ব্যবহার করে সাথী ফসল হিসেবে সব্জী, ফুল ও ফল চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের লক্ষ্যে এব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এছাড়া পরিশেগত উৎকর্ষতা বিধানেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। কৈ, শিং ও মাগুর মাছ সু-স্বাদু জনপ্রিয় মাছ এবং এসব মাছের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশেও এসব মাছের চাহিদা প্রচুর এবং ইতোমধ্যে রপ্তানী শুরু হয়েছে। মাছটি চাষের আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্যাদি জানতে চাই