গাছ গাছালি স্বভোজী জীব হিসেবে সালোকসংশ্লেষণের সময় ধারণকৃত কার্বন এবং মাটি থেকে গৃহীত নাইট্রোজেন এবং সালফারকে কাজে লাগিয়ে আমিষ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সব এমিনো এসিড তৈরি করতে সক্ষম। মানুষ নিজ দেহে তৈরি করতে পারে মাত্র ১১টি এমিনো এসিড। তার সঙ্গে মানুষকে খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয় ৯টি এমিনো এসিড। অবশ্য হিস্টিডিন শিশুদের জন্য এক অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড। এ ৯টি এমিনো এসিড তাই মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক । দৈনিক অত্যাবশ্যকীয় আমিষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয় লিউসিন আর ফ্যানাইল এলানিন। প্রতি কেজি ওজনের জন্য এদের প্রয়োজন ১৬ মি.গ্রা. করে। এরপরই হলো ভ্যালিন, আইসোলিউসিন আর লাইসিনের স্থান। প্রতি কেজি ওজনের জন্য থ্রিওনিনের চাহিদা হলো ৮ মি.গ্রা. আর ট্রিপটোফ্যানের চাহিদা মাত্র ৩ মি.গ্রা.।

অত্যাবশ্যক ও অনত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের তালিকা

অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড: 

  • হিস্টিডিন, আইসোলিউসিন, লিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফ্যানাইল এলানিন, থ্রিওনিন, ট্রিপটোফ্যান, ভ্যালিন

অনত্যাবশ্যক এমিনো এসিড:

  • এলানিন, এস্পারজিন, এস্পারটিক এসিড, আর্জিনিন, সিস্টিন, গ্লুটামিক এসিড, গ্লাইসিন, প্রোলিন, সেরিন, টাইরোসিন

 
খাদ্যের আমিষের প্রধান উৎস হলো দানাশস্য, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ। এদের মধ্যে আমিষের মাত্রার তারতম্য রয়েছে। দানা শস্যের আমিষের পরিমাণ শতকরা ৬-১২ ভাগ যা ডাল শস্যে ২০-২৫ ভাগ। মাছ, মাংস, ডিম ও দুধে আমিষের পরিমাণ যথাক্রমে শতকরা ১৮-২৫, ১৬-২৫, ১০-১৪ এবং ৩-৪ ভাগ। সাধারণ ভাবে আমিষের উৎস হিসেবে প্রাণিজ আমিষ উদ্ভিজ্জ আমিষের চেয়ে উৎকৃষ্ট। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফসলের কোনো কোনোটাতে কোন কোন অত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের ঘাটতি রয়েছে। কোন কোন ফসলে আবার কোন কোন অত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের প্রাচুর্যতাও রয়েছে।

উদ্ভিদজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশ ভালো। তৈল বীজে আমিষের পরিমাণ শতকরা ৪৫ ভাগের অধিক। এদের আমিষে কোন কোন এমিনো এসিডের অনেক কমতি থাকায় এরা আমিষের উত্তম উৎস নয়। মাছ মাংসে আমিষের পরিমাণ শতকরা ১৬-২৫ ভাগ। কিন্তু এদের আমিষে সব রকম এমিনো এসিডই বেশি পরিমাণে থাকায় এরা আমিষের উত্তম উৎস।

অধিকাংশ দানাদার খাদ্যে এক বা একাধিক অত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের ঘাটতি রয়েছে। ভুট্টাতে যেমন আইসোলিউসিন এবং লাইসিনের ঘাটতি রয়েছে অন্যদিকে এদের মধ্যে প্রচুর রয়েছে মিথিওনিন এবং ট্রিপটোফ্যান। সয়াবিনের দানায় আবার প্রচুর আইসোলিউসিন আর লাইসিন রয়েছে কিন্তু এদের দানায় ঘাটতি রয়েছে ট্রিপটোফ্যান এবং মিথিওনিন। প্রাণীজ আমিষেও কোন কোন এমিনো এসিডের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও সবগুলো এমিনো এসিডই মোটামুটি ভালো পরিমাণে বিদ্যমান থাকে বলে মাছ, মাংস, ডিম এসব আমিষের উত্তম উৎস। যদিও এমনকি দুধ, মাছ এবং মাংসেও কোন কোন এমিনো এসিডের কমতি রয়েছে। দুধে মিথিওনিন আর সিস্টিনের কমতি রয়েছে। অন্যদিকে মাছে কমতি রয়েছে ট্রিপটোফ্যানের। মাংসে আবার দুধের মতোই খানিকটা কমতি রয়েছে মিথিওনিন ও সিস্টিনের।

উদ্ভিজ্জ আমিষে এক বা একাধিক অত্যাবশ্যকীয় এমিনো এসিডের ঘাটতি থাকায় এদের আমিষ মান উন্নত নয়। পুষ্টিবিদরা বিভিন্ন উৎসের আমিষের মধ্যে তুলনা করে একটি আমিষ মান নির্ধারণ করেছেন। মুরগির ডিমে বিদ্যমান রয়েছে সবগুলো অত্যাবশ্যকীয় এমিনো এসিড এমন মাত্রায় যা মানুষের সব প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম বলে এর মান নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০। যেসব আমিষ উৎসের মান ৭০ এর নিচে এরা স্ব স্ব আমিষ দিয়ে মানুষের সব প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। যেসব মানুষ দানা শস্যজাত খাদ্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল এবং তাদের খাদ্যে যদি বৈচিত্র্যময় উৎস থেকে খাদ্য যোগ না হয় তবে তাদের মধ্যে কোন না কোন এমিনো এসিডের ঘাটতি থাকা খুবই স্বাভাবিক। ফলে উদ্ভিজ্জ খাদ্যের ওপর যারা নির্ভরশীল তাদের অবশ্যই নানা উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। দানা শস্যজাত খাদ্যের সঙ্গে তাদের মেশাতে হবে অবশ্যই ডাল শস্যজাত খাবার। যত ভিন্ন রকম উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করা সম্ভব হবে তত তা দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। ডিম ছাড়া এমনকি এমিনো এসিডের কমতি রয়েছে দুধ, মাছ এবং মাংসেও।

আমিষের পুষ্টিমান নির্ভর করে অত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের ওপর। যে আমিষে অত্যাবশ্যক এমিনো এসিডের মাত্রা মানুষের দেহের চাহিদার যত কাছাকাছি সে আমিষের পুষ্টি মূল্য তত বেশি। আমিষের জৈব মান দিয়ে এর পুষ্টি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কোন আমিষ থেকে দেহ বিশোষিত নাইট্রোজেনের যতভাগ কাজে লাগতে পারে সেটি হলো এর জৈবিক মান। যে আমিষের জৈবিক মান ১০০ সে আমিষকে আদর্শ আমিষ বলা হয়। সাধারণভাবে উদ্ভিজ্জ আমিষের তুলনায় প্রাণিজ আমিষের জৈবিক মান বেশি।
 
তথ্যসূত্র:

  • ভূঁইয়া মো. শহীদুর রশীদ (২০১৫) দেহের জন্য আমিষের গুরুত্ব। কৃষিকথা, বর্ষ ১৪২১ সংখ্যা কার্ত্তিক। কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)
Answer for অত্যাবশ্যক ও অনত্যাবশ্যক এমিনো এসিড বলতে কী বোঝায়?