কৈ মাছের শ্রেণীবিন্যাস (Classification)
       Phylum –   Chordata
         Class-     Osteichthyes
             Order-   Perciformes
                 Family- Anabantidae
                   Genus-   Anabas
                       Species- A. testudineus
 
সাধারণ/ স্থানীয় নাম: কৈ মাছ
ইংরেজী নাম: Climbing perch
 
বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
কৈ মাছ বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। এটি একটি জিওল মাছ অর্থাৎ এরা সামান্য পানিতে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। এ মাছের মাথা বড় ও প্রায় ত্রিকোণাকৃতি। দেহের বর্ণ কালচে-সবুজ বা বাদামি-সবুজ । মাথাসহ সারাদেহ শক্ত আঁইশ দিয়ে ঢাকা। দু’টো চোয়ালেই দাঁত আছে। পৃষ্ঠ ও বক্ষ পাখনা ধারালো কাঁটাযুক্ত। লেজ অর্ধচন্দ্রাকৃতি। শিরদাঁড়া রেখা দু’ভাগে বিভক্ত। কৈ মাছ কানকো দিয়ে স্থলভাগে চলাচল করতে পারে। কানকোর পিছনে কালো ফোঁটা বিদ্যমান।
দেশী কৈ মাছের পাশাপাশি আরেকটি নতুন জাত থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। যা ‘থাই কৈ’ নামে পরিচিত। এদের দেহ বর্ণ দেশী কৈ মাছের তুলনায় হালকা ফ্যাকাশে ধরণের এবং দেহের উপরিভাগে ছোট ছোট কালো দাগ থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক অঞ্চলেই সীমিত আকারে ‘থাই কৈ’ সফলভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।
 
আবাসস্থল
কৈ প্রধানত: মুক্ত জলাশয় বা প্লাবনভূমির মাছ। তবে সাধারণত: খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-দিঘী, ডোবা-নালা এবং নিমজ্জিত ধান ক্ষেতেও দেখতে পাওয়া যায়। এ মাছগুলো আড়ালিয়া জাতীয় উদ্ভিদ কলমি, হেলেঞ্চা এবং জলজ অন্যান্য ঝোপ-ঝাড় ও ডাল-পালা অধ্যুষিত জলাশয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। কৈ মাছ গর্তে নিমজ্জিত গাছের গুড়ির তলায় বা সুড়ঙ্গে বসবাস করে এবং স্রোতহীন আবদ্ধ পানিতে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
 
খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস
কৈ মাছ সাধারণত কীট পতঙ্গভোজী এবং কামড়িয়ে কামড়িয়ে খাবার খায়। জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এরা বিভিন্ন ধরণের খাদ্য খেয়ে থাকে। যেমন-

  • রেণু পর্যায়ঃ আর্টেমিয়া, জু-প্ল্যাংকটন, ক্ষুদ্র জলজ পোকা-মাকড় ইত্যাদি আকর্ষনীয় খাদ্য।
  • জুভেনাইল পর্যায়ঃ জু-প্ল্যাংকটন, ক্ষুদ্র জলজ পোকা, টিউবিফিসিড ওয়ার্ম।
  • বয়োপ্রাপ্ত অবস্থায়ঃ জলজ পোকা-মাকড়, বেনথোস, টিউবিফিসিড, ক্ষুদ্র চিংড়ি ও মাছ, ডেট্রিটাস, পচনরত প্রাণিজ দ্রব্যাদি।

 
পরিপক্কতা ও প্রজনন
প্রথম বছরেই কৈ মাছ পরিপক্কতা লাভ করে ও বছরে একবার প্রজনন করে। সর্বোচ্চ ১৭ সেমি.লম্বা হয়। কৈ মাছের উপযুক্ত প্রজননকাল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। তবে এরা মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রজনন সম্পন্ন করে থাকে। প্রজনন শুরুর পূর্বে বর্ষার বৃষ্টি নামলেই প্রজননের জন্য এরা মাইগ্রেট করে এরা ধানক্ষেত, ডোবা, পকুর-নালা, খাল-বিল ইত্যাদি স্থানে চলে যায়। সাধারণত এরা যে জায়গায় থাকে সে জায়গায় প্রজনন করে না। তাই ব্রিডিং মাইগ্রেশনের মাধ্যমে স্থান বদল করে নেয়। অত:পর এরা নতুন স্থানে এসে ঝোঁপ-ঝাড় জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে ডিম ছাড়ে ও প্রজনন সম্পন্ন করে থাকে। এদের ডিম ভাসমান। তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ১৮-২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। উক্ত বাচ্চা/রেণু পোনার কুসুমথলি ২/৩ দিনের মধ্যে ক্রমে ক্রমে শেষ হলে আস্তে আস্তে প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ করে এবং ক্রমান্বয়ে বড় হয়। এদের প্রণোদিত প্রজননও করানো যায়। পুরুষ কৈ মাছের তুলনায় স্ত্রী কৈ মাছ আকারে কিছুটা বড় হয়। একটি ৮০-১০০ গ্রাম ওজনের কৈ মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা ৬,০০০- ৮,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।
 
তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for কৈ মাছের আবাসস্থল ও খাদ্যাভ্যাস জানতে চাই