বাংলাদেশ মিঠা পানির মৎস্য চাষের ক্ষেত্র হিসেবে পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অনতম। সাম্প্রতিককালে মৎস্যখাতে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার চীন ও ভারতের সাথে তুলনীয়। বিশাল জলরাশিতে সমৃদ্ধ এদেশে মাছচাষের অফুরন্ত সম্ভাবনা বিদ্যমান। সুদূর অতীতে প্রাকৃতিকভাবেই দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তখন দেশীয় মাছ চাষ করার বিষয়ে ভাবার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কয়েক দশকে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের আবাসস্থল সংকোচন, জনসংখ্যার আধিক্য, সেচে অপরিমিত পানির ব্যবহার, কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণেই মাছের প্রাকৃতিক বংশ বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের দিক থেকেও অনন্য এদেশের আভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ বিদ্যমান। যার মধ্যে ১৫০টি হচ্ছে ছোট মাছ। এসব ছোট মাছের মধ্যে ৫০টি প্রজাতি সচরাচর আভ্যন্তরীণ জলাশয়ে পাওয়া যায়; যার উল্লেখযোগ্য অংশ ক্রমেই সংকটাপন্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ এসব দেশীয় প্রজাতির মাছের পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য অনেক বেশি। উক্ত প্রজাতিগুলোর মধ্যে কৈ, শিং ও মাগুর মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রিয় এসব মাছ আজ এদেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। অপূর্ব স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উচ্চ বাজারমূল্য বিবেচনায় এসব মাছকে বাঁচাতে হবে এবং এদের চাষ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় অসংখ্য পুকুর-দিঘি রয়েছে। এসব পুকুর-দিঘির অধিকাংশই কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের উপযুক্ত এবং এসব পুকুরে উন্নত সনাতন পদ্ধতি কিংবা আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। এসব পুকুরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্মতভাবে কৈ, শিং ও মাগুরের চাষ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাহ্যিকভাবে কৈ মাছের উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি ৬-৭ মেট্রিক টন এবং দেশী শিং ও মাগুরের উৎপাদনশীলতা ৫-৬ মে.ট্রিক টন।
কৈ, শিং ও মাগুর মাছ আমাদের দেশে জনপ্রিয় জিওল মাছ হিসেবে পরিচিত। আবাসস্থল সংকোচন, পরিবেশগত বিপর্যয়, প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ ভরাট এবং খাল বিল পানি শুন্য হওয়ায় এসব মাছ দ্রৃত হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কেউই তেমন গুরুত্ব দেয়নি। চাষ পদ্ধতিতে এসব মাছ অন্তর্ভূক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। উচ্চ বাজার মূল্য, ব্যাপক চাহিদা ও অত্যান্ত লাভজনক হওয়া সত্বেও পোনার অপ্রতুলতার কারণে এসব মাছের চাষ আশানুরূপ প্রসার লাভ করছে না। তদুপরি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এসকল মাছ চাষে চাষীগন বেশ উৎসাহি ও আগ্রহি হয়ে উঠেছেন। প্রযুক্তিগত ও বিভিন্ন কলা কৌশল সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ প্রদান করতে পারলে এসকল মাছচাষ আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ লাভ করবে। উল্লেখ্য যে, জনপ্রিয় কৈ মাছের আরেকটি নতুন জাত যা ‘থাই কৈ’ নামে পরিচিত। এখন আমাদের দেশে থাই কৈ সীমিত পর্যায়ে চাষ করা হচ্ছে। থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বাংলাদেশে সফলভাবে করা হচ্ছে। দেশী কৈ মাছ অপেক্ষা থাই কৈ-এর গড় উৎপাদন বেশি ও অধিক লাভজনক হওয়ায় চাষিরা এ মাছ চাষে বেশ উৎসাহি হচ্ছেন। অন্যদিকে শিং ও মাগুরের ক্ষেত্রে খুবই সীমিত আকারে বেসরকারি পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ করা হচ্ছে যা উৎসাহজনক। কিন্তু এসব মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনার ওপর মৎস্য চাষিদের উপযোগি কোন পুস্তক না থাকায় চাষিরা কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: DoF
Answer for কৈ শিং মাগুর মাছ চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাই