চর লক্ষীর মৎস্য অভয়াশ্রম
কথিত আছে, মেঘনা নদীর শেষ প্রান্তে হঠাৎ একদিন ধরা পড়ে একদল ডাকাত। তা থেকে মেঘনার এ শাখা নদীটির নাম হয় ডাকাতিয়া। এক সময় মাছে ছিল ভরপুর। একদিকে জনসংখ্যার আধিক্য ও অন্যদিকে জলজ পরিবেশের মারাত্মক অবক্ষয়ে দিন দিন কমতে থাকে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। হত দরিদ্র মৎস্যজীবীরা হয়ে পড়ে দিশেহারা। এ সময় মৎস্য অধিদপ্তরের ‘‘অভয়াশ্রম স্থাপনের বার্তা’’ মৎস্যজীবীদের দেয় নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা। সনটি ছিল ২০০১, চতুর্থ মৎস্য প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় ডাকাতিয়া নদীর উত্তরাংশে স্থাপিত হয় ‘‘মৎস্য অভয়াশ্রম’’। ক্রমে বাড়তে থাকে মাছের প্রাচুর্যতা ও উৎপাদন। যার সুফল দেখে নতুন করে অভয়াশ্রম স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হয় লক্ষীপুর জেলার রায়পুরের চরলক্ষী গ্রামের দক্ষিনাংশের মৎস্যজীবীরা। গড়ে তোলে ১২০ সদস্য বিশিষ্ট চরবংশী বহুমুখী সমাজ কল্যাণ সমিতি। শুরু হয় ৫০ হেক্টর জলায়াতনের মধ্যে অভয়াশ্রম স্থাপনের কার্যক্রম।
দিনটি ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৮। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ ‘‘দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিষয়ক’’ মডিউল প্রণয়ন টীম হাজির হন মৎস্য সংরক্ষণে অভয়াশ্রমের ভূমিকা জানার জন্য। কথা হয়, সমিতির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে। তাঁদের মতে, পূর্বে যেখানে ছিল না শোল, বোয়াল, টাকি, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর, ফলি, বাঘাইর, মেনি, মলা, পুঁটি, টেংরা, খলিশাসহ অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রাচুর্যতা। হারিয়ে যেতে বসেছিল বাঙ্গালীর অতীত ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা। এখন সেখানে মৎস্য অভয়াশ্রমটি সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবস্থাপনা করে মৎস্যজীবীরা পাচ্ছেন অধিক মাছ ও হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির বৈচিত্র্যতা। সংরক্ষিত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, ঘটছে সমিতির সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তবে তাদের মতে, গার্ড সেড নির্মান, অভয়াশ্রম মেরামত, ইঞ্জিন নৌকা ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদনে সরকারের সহযোগিতা পেলে মৎস্য অভয়াশ্রম কার্যক্রমে বাড়বে আরো গতিশীলতা, আসবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। তাই এখন চরলক্ষীর সকল জনগণের মুখে একই কথা-
‘‘ অভয়াশ্রমে থাকলে মাছ
মাছ পাওয়া যায় বার মাস’’
তথ্যসূত্র: DoF, Bangaldesh