কিভাবে কি করতে হয়? পোনার হার কত? পানি কত লাগে? কয় দিন পর পানি বদলাতে হয়?
শিং মাগুর মাছ চাষে কি ধরণের পাত্র চৌবাচ্চা বাছাই করবেন
ক) বাড়িতে শিং মাগুর মাছ চাষ করার জন্য আপনি মাঝারি অথবা বড় সাইজের চৌবাচ্চার ব্যবস্থা করতে পারেন।
খ) তবে খেয়াল রাখবেন চৌবাচ্চাটি যেন গভীর হয় (৩ থেকে ৪ ফুট)।
শিং মাগুর মাছ চাষ করার সঠিক সময়/মৌসুম
ক) বাড়িতে শিং মাগুর মাছ চাষ করার জন্য আপনি বছরের যেকোন সময় নির্বাচন করতে পারেন। তবে এই মাছ চাষের আদর্শ সময় এপ্রিল-মে মাস।
খ) এছাড়াও জুন-জুলাই মাসেও এই মাছের চাষ করা যায়।
গ) তবে খেয়াল রাখবেন যে বাড়িতে চৌবাচ্চায় শিং মাগুর মাছের পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সকাল অথবা সন্ধ্যা এই দুই সময়ের যেকোন একটি নির্বাচন করতে হবে।
ঘ) কারণ এসময় তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় থাকে।তা না হলে মাছ মরে যেতে পারে।
কিভাবে শিং মাগুর মাছের পোনা ছাড়তে হবে ও সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে
ক) বাড়িতে চৌবাচ্চায় শিং মাগুর মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
খ) এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ যেকোন নার্সারী হতে পোনা আহরন করতে পারেন।
গ) এছাড়াও আপনি প্রাকৃতিক ভাবে খাল, বিল কিংবা যেকোন ধরণের জলাশয় থেকে পোনা আহরণ করতে পারেন। এখন বর্তমানে শিং মাগুর মাছের পোনা পলিব্যাগে কিনতে পাওয়া যায়।
ঘ) আপনি সেখান থেকেও পোনা আহরন করতে পারেন। তবে পোনা ছাড়ার পর আপনাকে পোনার সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে।
সঠিক নিয়মে শিং মাগুর মাছের চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল
ক) চৌবাচ্চায় শিং মাগুর মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে।
খ) চৌবাচ্চায় পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন কৃত পোনা ব্যাগ সহ পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।
গ) এরপর পরিবহনকৃত ব্যাগের পানি ও চৌবাচ্চার পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে।
ঘ) তারপর ব্যাগের মুখ খুলে চৌবাচ্চার পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে চৌবাচ্চায় ফেলতে হবে।
ঙ) ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে এরূপভাবে পোনাকে চৌবাচ্চার পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। এরপর শিং মাগুর মাছের পোনা পানিতে ছাড়তে হবে।
শিং মাগুর মাছের খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ
ক) শিং মাগুর মাছ চাষে সাধারণত বেশী খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
খ) তবে আপনি যদি ভাল ফলন পেতে চান তাহলে শিং মাগুর মাছের চৌবাচ্চায় ফিশমিল, সয়াবিন চূর্ণ, ভুট্রা চূর্ণ, গমের ভূসি, ধানের কুঁড়া, সরিষার খৈল, চিটাগুড় ইত্যাদি খাবার দিতে পারেন।
গ) এতে মাছের ভাল ফলন পাওয়া যায়।
শিং মাগুর মাছের রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার
ক) শিং মাগুর মাছের মূলত তেমন কোন রোগ বালাই হয় না।
খ) তবে মাঝে মধ্যে মাছের গায়ে সাদা ফুসকুড়ি দেখা যায়।
গ) এটা দেখা গেলে সাথে সাথে পানিতে উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
শিং মাগুর মাছ চাষে সার প্রয়োগ
ক) শিং মাগুর মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে চৌবাচ্চায় সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে।
খ) মাঝেমধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে।
গ) এতে পানির গুণাগুণ বজায় থাকে এবং মাছের কোন ক্ষতি হয় না। বরং এতে মাছের বৃদ্ধি অনেক ভাল হয়।
কিভাবে শিং মাগুর মাছের যত্ন নিবেন
ক) বাড়িতে চৌবাচ্চা বা অন্য যেকোন ধরণের পাত্রে শিং মাগুর মাছের চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন নিতে হবে।
খ) সঠিকভাবে মাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাস দরকার,। এবং প্রচন্ড রোদে যেন চৌবাচ্চার পানি বেশি গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গ) এছাড়াও যদি পানির কোন সমস্যা হয় তাহলে পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে পানিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে পানির সঠিক মান ফিরিয়ে আনতে হবে।
ঘ) এছাড়াও চৌবাচ্চার তলদেশ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নন রাখতে হবে। মাছের যত্ন নিতে হবে।
শিং মাগুর খাদ্য গুণাগুণ
ক) শিং মাগুর মাছের মধ্যে অনেক ধরনের খাদ্য গুনাগুন রয়েছে। এই মাছটি খেতে অনেক সুস্বাদু।
খ) পুষ্টির দিক দিয়ে এই মাছ অন্য সব মাছের তুলনায় সবার উপরে। রোগীর পথ্য হিসেবে শিং-মাগুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গ) রক্ত স্বল্পতায় ভোগা অনেক রুগী এই মাছ পথ্য হিসেবে খেয়ে থাকেন।
কখন শিং মাগুর মাছ সংগ্রহ করবেন
ক) বাড়িতে চৌবাচ্চায় সঠিক নিয়মে শিং মাগুর মাছের চাষ করার পর তা বেশ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে।
খ) মাগুর মাছ ৮-১০ মাস আর শিং মাছ ৪-৬ মাসের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
কি পরিমাণে শিং মাগুর মাছ পাবেন
ক) বাড়িতে চৌবাচ্চায় সঠিক নিয়মে শিং মাগুর মাছ চাষ করলে সেখান থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণে শিং মাগুর মাছ পেতে পারেন।
খ) যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আপনি ইচ্ছা করলে এই মাছ বাজারে বিক্রিও করতে পারেন।
তথ্যসূত্র: পিপিলিকা (www.pepeelika.com)
মিঠাপানির মাগুর মাছ সুস্বাদু ও দ্রুতবর্ধনশীল। যে কোনো আকারের জলাধারে এ মাছ চাষ করা যায়। বাড়ি বানানোর সময় ইট ভেজানোর জন্য চৌবাচ্চা বানানো হয়। তাতেই সম্ভব। বাড়ির ছাদে বা কোনো পরিত্যক্ত জায়গা পাওয়া গেলেও চলবে। অর্থাৎ একটি ১৫ ফুট দীর্ঘ, ৫ ফুট প্রস্থ ও ৩ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট হাউস হতে হবে। যদি না পাওয়া যায়, এ মাপের একটি গর্ত খুঁড়ে পলিথিন বিছিয়ে পানি ধারণের ব্যবস্থা করে একটি মিনি পুকুর তৈরি করে নেয়া যেতে পারে। এতে ১০০টি পোনা মাগুর চাষ করে তিন মাসেই তা বিক্রি করা যায়। বিদেশি এ মাগুরের আকৃতি দেশি মাগুরের চেয়ে বড় এবং অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ।
চৌবাচ্চার প্রস্তুতি
চৌবাচ্চাটি ভালো করে পরিস্কার করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করতে চৌবাচ্চায় ১০০ গ্রাম চুন গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন দেয়ার পর পানি সরবরাহ করে পরদিন ১-২ কেজি পঁচা গোবর, ১-২ কেজি মুরগির বিষ্ঠা ছিটিয়ে দিতে হবে। দু’একদিন পর পানি ভালোভাবে নেড়ে ১৫০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম চালের কুঁড়া, ৫০ গ্রাম শুঁটকি মাছ ও ২৫ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি দেয়া উচিত। দু’তিন দিনের মধ্যে পানির বর্ণ সবুজ হয়ে যাবে। এ সময়ই মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত।
পোনা প্রাপ্তি ও মজুদ
যে কোনো সরকারি, বেসরকারি হ্যাচারি, পোনা বিক্রেতা ও সরকারি কৃষি খামারে পোনা পাওয়া যায়। ১ ইঞ্চি মাপের ১০০টি পোনা একটি চৌবাচ্চায় মজুদ করা যেতে পারে। ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী থেকে পোনাকে সাবধানে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ৫-৭ ইঞ্চি পোনা ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাছের খাবার
এ পদ্ধতির জন্য সম্পূরক খাবার অপরিহার্য। পোনা মজুদের পর দিন থেকে সয়াবিন, তিল, সরিষার খৈল ৪০ শতাংশ, আতপ চালের কুঁড়া ৪০ শতাংশ, শুঁটকির গুঁড়া ২০ শতাংশ করে মাছের খাবার দিতে হবে। এর সঙ্গে জবাইকৃত প্রাণীর জমা রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, ঝিনুক বা শামুকের মাংস এবং সামান্য পরিমাণ লবণ, আটা ও ভিটামিন মিশ্রিত খাবার দেয়া যেতে পারে। মাছের রোগ থেকে রক্ষা পেতে খাবার উপাদানে বিশুদ্ধতা বজায় রাখা উচিত। মাছের বৃদ্ধি বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও টিএসপি দেয়া যেতে পারে। সঠিক পরিমাণে মাছের খাবারের জন্য ১১টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি ধাপে সময় থাকবে পাঁচদিন করে। প্রথম থেকে একাদশ ধাপে যথাক্রমে ২৫০০, ৪০০, ৫০০, ৬০০, ৭০০, ৮০০, ৯০০, ১০০০, ১১০০, ১১০০ ও ১২৫০ গ্রাম হারে খাবার দিতে হবে। পানির রঙ গাঢ় সবুজ বা পানির ওপরে সবুজ আবরণ পড়লে খাবার বন্ধ রাখতে হবে।
পানি পরিবর্তন
২৫-২৮ দিন পরপর চৌবাচ্চার সব পানি ফেলে, নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে। এরপর ১৫ গ্রাম চুন গুলিয়ে পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
মাছ আহরণ
মাছের ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম হলেই বিক্রি করে দেয়া ভালো। কারণ এ রকম মাছের চাহিদা বেশি এবং অল্প সময়ে আবার মাছ ছাড়া যাবে।
উৎপাদন
৬৭-৭৫ দিনের এক চাষে পরিপূর্ণ পরিচর্যা করলে ১০০টি পোনার প্রায় ৯৫টি বেঁচে থাকবে। যার ওজন হবে প্রায় ১৭৫ কেজি।