মাগুর আঁইশবিহীন জিওল মাছ, দেহ লালচে বাদামি বা ধূসর কালো, সাধারণত ২০-৩০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয় । মাগুর মাছে অতিরিক্ত শ্বসনযন্ত্র থাকার ফলে দীর্ঘক্ষণ পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। খাল, বিল, প্লাবনভূমি, হাওর-বাঁওড়, পুকুর দিঘী, ডোবা- নালা এবং নিমজ্জিত ধানক্ষেত মাগুর মাছের প্রধান আবাসস্থল। স্রোতহীন আবদ্ধ পানিতে আগাছা, নল- খাগড়া, কচুরিপানায় এবং পচা ডাল-পালা যুক্ত জলাশয়ে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারে। মাগুর মাছ সাধারণত সর্বভূক (omnivorous) এবং জলাশয়ের তলায় বসবাস করে।
প্রাকৃতিক প্রজনন

  • মাগুর মাছ এক বছরের মধ্যেই পরিপক্কতা লাভ করে এবং বছরে একবার প্রজনন করে থাকে। একই বয়সের স্ত্রী মাগুর মাছ পুরুষ মাগুর মাছের তুলনায় কিছুটা আকারে বড় হয়। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রজনন সম্পন্ন করে।
  • প্রজননকাল মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত। তবে জুন- জুলাই মাসে সর্বানুকুল প্রজনন কাল হিসেবে বিবেচিত।
  • প্রজননের সময়ে নতুন পানি আসার সাথে সাথেই এরা মাইগ্রেট করে নিকটবর্তী ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, প্লাবনভূমির ঝোঁপ-ঝাড় এলাকায় যায় এবং সেখানে মাটিতে গোলাকার গর্ত করে তাতে ডিম ছাড়ে।
  • মাগুর মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা দৈহিক ওজনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাধারণত ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের মাগুর মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা ৭,০০০-১০,০০০ টি।
  • মাগুরের পরিপক্ক ডিম হালকা সবুজ থেকে তামাটে বর্ণের হয়ে থাকে। নিষিক্ত ডিম আঠালো এবং গাছের ডাল-পালা ও আগাছায় লেগে থাকে।
  • ১৮-২০ ঘন্টা পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ২-৩ দিনের মধ্যে কুসুম থলি নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ার পর টিউবিফিসিড ওয়ার্মস ও ক্ষুদ্র জলজ পোকা-মাকড় খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে ও দৈহিক বৃদ্ধি হয়।

 
প্রণোদিত প্রজনন
হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়েও মাগুর মাছের প্রজনন করানো যায়। বর্তমানে অনেক সরকারী-বেসরকারী হ্যাচারীতে মাগুর মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন সফলতা লাভ করেছে।

  • ব্রুড প্রতিপালনঃ উন্নত মানের পোনা উৎপাদনের জন্য প্রজনন ঋতুর ৩-৪ মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে সুস্থ-সবল ব্রুড মাছ সংগ্রহ করতে হবে। মজুদ পুকুরে প্রতি শতাংশে ৬০-৮০ টি মাছ রেখে ৩০-৩৫% আমিষ সমৃদ্ধ সম্পুরক খাবার মাছের দেহ ওজনের ৪-৫% হারে প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি সপ্তাহে শতাংশ প্রতি ৭-৮ কেজি গোবর এবং ইউরিয়া ও টিএসপি সার ১০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে নিয়মিতভাবে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
  • প্রজননের জন্য ইনজেকশন দেয়ার অন্ততঃ ৬ ঘন্টা পূর্বে ব্রুড মাছ পুকুর থেকে সতকর্তার সাথে পরিবহন করে হ্যাচারিতে এনে সির্স্টানে রেখে পানির ফোয়ারা দিতে হবে।
  • স্ত্রী মাছকে প্রতি কেজিতে ২ মিলি ওভাপ্রিম অথবা ২ মিলি সুপ্রিম অথবা ৮০-১১০ মিলিগ্রাম পিজি একবার প্রয়োগ করতে হয়। পুরুষ মাছকে প্রতি কেজিতে ১ মিলি ওভাপ্রিম/সুপ্রিম অথবা ৩০-৪০ মিলিগ্রাম পিজি একবার হরমোন হিসাবে প্রয়োগ করতে হয়।
  • ইনজেকশন দেয়ার ১২-১৬ ঘন্টা পর মাছ ডিম দিয়ে থাকে।
  • পুরুষ মাছের পেট কেটে শুক্রাশয় বের করে ০.৯% লবন দ্রবণে মিশিয়ে শুক্রানুর দ্রবণ তৈরী করা হয়।
  • স্ত্রী মাছের পেটে চাপ দিয়ে ডিম বের করা হয় এবং শুক্রানু দ্রবণের সাথে মিশিয়ে ডিম নিষিক্ত করা হয়।
  • নিষিক্ত ডিম মেটাল ট্রে/সিমেন্ট সিস্টার্নে ভালভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ঝর্ণা আকারে পানি প্রবাহের সৃষ্টি করতে হয়।
  • তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ২৪-৩০ ঘন্টা পর ডিম ফুটে লার্ভি বের হয়।
  • ডিম ফুটার ২-৩ দিন পর রেণুকে ডিমের কুসুম/আর্টিমিয়া/টিউবিফেক্স খাবার হিসাবে দিতে হয়।

 
পোনা প্রতিপালন

  • মাগুর মাছের পোনা প্রতিপালনের জন্য নার্সারি পুকুরের আয়তন ২৫-৩০ শতাংশ এবং গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভাল হয়।
  • সঠিক পদ্ধতিতে নার্সারি পুকুর প্রস্ত্তত করার পর প্রতি শতাংশে ৮,০০০-১০,০০০ টি পোনা (৫-৭ দিন বয়স) মজুদ করা যেতে পারে হবে।
  • সাপ, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি রোধে পুকুরের চারপাশে ১ মিটার উচ্চতায় নাইলন নেট স্থাপন করতে হবে।
  • প্রথম ২৫ দিন পোনার দেহ ওজনের দ্বিগুন হারে ২০-২৫% আমিষ যুক্ত বাণিজ্যিক নার্সারী খাবার দিতে হবে।
  • নার্সারি পুকুরে পোনাকে প্রথম ২-৩ দিন টিউবিফেক্স সরবরাহ করতে হবে, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে।
  • বরাদ্দকৃত খাবার দিনে ২-৩ বারে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
  • পোনা নার্সারি পুকুরে ২৫-৩০ দিন প্রতিপালনের পর চাষের পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত হবে।

 
 
তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for মাগুর মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল সম্পর্কে জানতে চাই