মলা ও পুঁটির একক চাষ নিচে বর্ণনা করা হল –

পুকুর নির্বাচন

  • মলা বা পুঁটি মাছের একক চাষের জন্য বাৎসরিক বা মৌসুমী পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে ।
  • পুকুরের আয়তন ১০-১৫ শতক এবং গভীরতা ১.০-১.৫ মিটার থাকা আবশ্যক।
  • পুকুর পাড়ে বড় গাছপালা না থাকা বাঞ্চনীয়।
  • প্রয়োজনে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা, এতে পরিপক্ক মাছের প্রজনন ঘটানো সহজতর হয়।
  • আয়াতাকার পুকুর যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও অবাধ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে।

পুকুর প্রস্তুতি

  • বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দূর করতে হবে। পুকুর শুকিয়েও রাক্ষুসে মাছ দূর করা যায়।
  • প্রতি শতকে ১.০-১.৫ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি শতকে ৫-৭ কেজি হারে গোবর দিতে হবে। পানির রং সবুজাভ হলে পোনা ছাড়তে হবে।

 
পোনা মজুদ

  • মলা বা পুঁটি মাছ অত্যন্ত নাজুক বিধায় পরিবহনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সকালে বা বিকালে কম তাপমাত্রায় মাছ পরিবহন করা ভালো।
  • বড় আকারের (৫-৭ সেমি.) পরিপক্ক মলা বা পুঁটি মাছ ছেড়ে এই মাছের একক চাষ করা যেতে পারে।
  • এপ্রিল-মে মাসে মলা ও পুঁটি মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় প্রাকৃতিক উৎস যেমন- খাল-বিল বা বড় পুকুর হতে মলা-পুঁটির ব্রুড সংগ্রহ করে চাষের পুকুরে মজুদ করতে হবে।
  • প্রতি শতকে ৪০০টি মলা বা পুঁটি মাছ মজুদ করতে হয়।

সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি

  • মাছ ছাড়ার পরদিন হতে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
  • মাছের দেহের মোট ওজনের ৫% হারে চালের কুড়া/গমের ভূষি (৮০%) ও সরিষার খৈল (২০%) এর মিশ্রণ তৈরি করে পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
  • প্রতি মাসে মাছের নমুনায়ন করে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারন করতে হবে।

সার প্রয়োগ
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য ৭ দিন অন্তর প্রতি শতকে ৫-৬ কেজি গোবর সার দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। পুকুরে উৎপাদনশীলতা ও ঋতুভেদে সার প্রয়োগের হার কম বেশি হতে পারে।

মাছ আহরণ

  • মলা/ পুঁটি মাছ মজুদ করার ১-২ মাসের মধ্যে (এপ্রিল-মে) পুকুরে প্রাকৃতিক প্রজনন করে থাকে। বছরে এরা ২ বার ডিম দেয় (মে ও অক্টোবর)। মাছ মজুদের ২ মাস পর ঘন ফাঁসের জাল টেনে পোনা ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে। পুঁটি মাছ ধরার জন্য ঝাঁকি জাল ব্যবহার করতে হবে। মাছ মজুদের ২ মাস পর থেকে প্রতি ১৫ দিন পর পর মাছ আহরণ করতে হবে।
  • ছয় মাস পর পুকুরের পানি শুকিয়ে সমস্ত মাছ ধরা যেতে পারে।

রোগ-বালাই ও তার প্রতিকার
অন্যান্য জীবের ন্যায় ছোট মাছও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। পুকুরের মাছ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবি ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। এছাড়া অপুষ্টি ও খাদ্যের অভাব, অক্সিজেনের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাছের রোগ হয়। মাছের ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে পুকুর প্রস্ত্ততি সঠিকবাবে করতে হবে। অন্য পুকুরে ব্যবহৃত জাল শোধন ব্যতীত পুকুরে ব্যবহার করা উচিত নয়। তাছাড়া শীতের শুরুতে (ভাদ্র-আশ্বিণ) পুকুরের প্রতি শতক জলায়তনে ২৫০ গ্রাম চুন ও ২৫০ গ্রাম লবণ প্রতি সপ্তাহে একবার করে ৪-৬ সপ্তাহ প্রয়োগ করলে মাছ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

উৎপাদন
মলা ও পুঁটি মাছের ৬ মাসে উৎপাদন যথাক্রমে প্রতি একরে ১২০০-১৫০০ ও ১৫০০-২০০০ কেজি।

আয়-ব্যয়
একক চাষ পদ্ধতিতে ৬ মাসে ২০ শতকের পুকুরে মলা-পুঁটি চাষের আয় ও ব্যয়ের হিসাব –

খাত মলা পুঁটি
পরিমাণ মূল্য (টাকা) পরিমাণ মূল্য (টাকা)
ব্যয়
পুকুর সংস্কার মজুরী ৩০০ ৩০০
চুন ২০ কেজি ৩০০ ২০ কেজি ৩০০
গোবর ১৬০ কেজি ৮০ ১৬০ কেজি ৮০
মাছের পোনা ৮০০০ টি ৪০০০ ৮০০০ টি ৪০০০
খাদ্য·      চালের কুড়া·      সরিষার খৈল ২২৫ কেজি৭৫ কেজি ২৭০০১৫০০ ৩৪০ কেজি১১০ কেজি ৪০৮০২২০০
গোবর ১৬০ কেজি ৮০ ১৬০ কেজি ৮০
বিবিধ ৫০০ ৫০০
সর্বমোট ব্যয় ৯৪৬০ ১১৫৪০
আয়
মলা ১২০ কেজিপুঁটি ১৬০ কেজি (@ ১০০ টাকা) ১২০ কেজি ১৪৪০০ ১৬০ কেজি ১৬০০০
প্রকৃত মুনাফা ৪৯৪০ ৪৪৬০

———————————-
তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for মলা ও পুঁটির একক চাষ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই