বিদ্যুৎ মাছে (Electric Fish) প্রাপ্ত বিশেষায়িত যে অঙ্গ থেকে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয় তাকে বলা হয় বৈদ্যুতিক অঙ্গ (Electric organ)। এই অঙ্গ মূলত রূপান্তরিত তথা পরিবর্তিত পেশিকোষ বা স্নায়ুকোষ দ্বারা বিশেষভাবে গঠিত যা শুধু বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরির জন্যই। এই বৈদ্যুতিক অঙ্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রই বৈদ্যুতিক মাছের লেজে অবস্থিত। এ অঙ্গ থেকে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তিকে ইংরেজীতে বলা হয় Electric Organ Discharge যা সংক্ষেপে EOD।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ইলেক্ট্রিক ফিশ দু’ধরণের হয়ে থাকে। যথা – শক্তিশালী ও দুর্বল।
- শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক ফিশ সাধারণত ১০ থেকে ৫০০ ভোল্ট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে। যেমন- ইলেক্ট্রিক ইল, ইলেক্ট্রিক রে, ইলেক্ট্রিক ক্যাটফিশ।
- দুর্বল ইলেক্ট্রিক ফিশ কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তা পথ চলা,বস্তু সনাক্তকরণ ও যোগাযোগ করতে সক্ষম। যেমন- Gnathomemus Petersi এবং Apteronotus Albifrons ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত প্রায় তিন শ রকম মাছের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো ০.২ থেকে ২ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম। এগুলো সাধারনত নিরীহ প্রকৃতির এবং চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। তবে এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এরা মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য ভয়ংকর হতে পারে।
লোনা ও স্বাদু উভয় ধরনের পানিতে বিদ্যুৎ মাছ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিন আফ্রিকার সাগর ও নদীর স্বচ্ছ পানিতে এ মাছ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরণের বৈদ্যুতিক মাছের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায়। ইলেক্ট্রিক ইল নামক মাছ শুধু রাতের বেলায় শিকার খুঁজতে বের হয়। এর ইলেক্ট্রিক শকের ক্ষমতা এত বেশি যে বড় প্রাণীও ঘায়েল হয়ে যায়। দক্ষিণ আমেরিকার নদনদীতে এবং খালবিলে এই বিপজ্জনক মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ইলেক্ট্রিক ঈল লম্বায় প্রায় ৬ ফুট এবং ২০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এরা প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। এদের মাথা কিছুটা সাপের মতো আর দেহ বাইন মাছের মতোই দেখায়। এদের পান্নার মতো সবুজ চোখ দুটো মুখের দিকে অনেক সামনে অবস্থিত। এদের দেহের চার-পঞ্চমাংশের মধ্যে রয়েছে প্রধানত বিদ্যুৎ উপাদানের অঙ্গ। এসব অঙ্গের কোষকলা ব্যাটারির পাতের মতো একটির পর আরেকটি বহু স্তরে গঠিত। এগুলো যে বিদ্যুৎ উপাদন করে তা মাথা থেকে লেজের দিকে প্রবাহিত হয়।