ছোট মাছের পোনা পরিবহন রুই জাতীয় পোনা পরিবহনের মত হলেও একটু ভিন্নতা রয়েছে। ছোট মাছের মধ্যে কৈ, শিং মাগুও পাবদা, গুলশা ইত্যাদি মাছ কাটাযুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিং মাগুও পাবদা, গুলশা ইত্যাদি ছোট পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণ করাই উত্তম।

কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা নাসারি পুকুরে ২৫-৩৫ দিন প্রতিপালনের পর যখন কৈ মাছের পোনাগুলো ২.৫- ৩ সেমি. আকারের হয় তখন মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হয়। উৎসস্থল থেকে মজুদ পুকুরের দুরত্ব যতকম হয় পোনার মৃত্যু হার তত কম হয়। বেশী দুরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশী হয়। যে কোন উৎস থেকে সংগ্রহ ও পরিবহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। পদ্ধতিসমূহ নিম্নরুপঃ
১) সনাতন পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিটি সনাতন হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পোনা পরিহনের এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে রেণু (Spawn) পরিবহণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই কম। এ পদ্ধতিতে এ্যালুমিনিয়ামের পাতিল বা ড্রামের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করতে হয়। পোনা পরিবহনের পূর্বে অবশ্যই পোনা টেকসই করে নিতে হবে। টেকসই করণের পর পোনা পরিবহণ উপযোগী হলে পরিমাণ মত নলকুপ/নদী/ পুকুরের পরিস্কার ঠান্ডা পানি নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে সাধারণত: ২০-৩০টি পোনা/লিটার ঘনত্বে পরিবহণ করা যায়। মাঠ পর্যায়ে এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহনের হার নিম্নরুপ (৬-৮ ঘন্টার ভ্রমনে)ঃ
পাতিলের মাধ্যমে

  • কৈ মাছ – ১০০০-১৫০০টি (৮-১২ লি: পানি)
  • শিং ও মাগুর- ১০০০-২০০০টি (৮-১২ লি: পানি)
  • পাবদা ও গুলশা ১০০০-১৬০০টি (৮-১২ লি: পানি)

ড্রামের মাধ্যমে

  • কৈ- গড় ওজন ০.২- ০.৩ গ্রাম হলে ৭-৮ হাজার প্রতি ড্রামে।
  • কৈ গড় ওজন ০.৪-০.৫ গ্রাম হলে ৫-৬ হাজার প্রতি ড্রামে।
  • শিং ও মাগুর- ৪০০০- ৬০০০টি প্রতি ড্রামে।

উল্লেখযোগ্য যে শিং এবং মাগুর মাছের পোনা ড্রামে/পাতিলে পরিবহণ না করাই ভাল। কারণ দ’ুটো মাছই তলদেশী। ফলে বুকে ঘসা লেগে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং পরে পোনা ইনজেকশন হওয়ার কারণে মারা যায়।
এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহণ কালে পাতিল/ ড্রামে মুখ ভেজা পাতলা কাপড় বা মশারীর জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে পাতিল/ড্রামের পানিতে হাত দিয়ে বা ঝাঁকিয়ে বাতাসের অক্সিজেন মিশাতে হয় এবং ৪/৫ঘন্টা পর পর পানি বদলাতে হয়। পোনা পরিবহণকালে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রাম/পাতিলের পানি অত্যাধিক গরম না হয়।

২) আধুনিক পদ্ধতি:

এ পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে পানি এবং অক্সিজেন সহ পোনাকে প্যাকেট করে পরিবহণ করা হয়। সাধারণত বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৬৬ সেমি. x ৪৬ সেমি. আকারের পলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহণ করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ২টি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করাই উত্তম। কোন কারণে যদি একটি ব্যাগ ছিদ্র হয়ে যায় তবে দ্বিতীয়টি পানি, অক্সিজেন ও পোনা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

পোনা প্যাকিং করার সময় সমান আকারের দুইটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে একটি অন্যটির ভিতর ঢুকিয়ে তার ১/৩ অংশ পানি দ্বারা ভর্তি করতে হবে এবং ব্যাগের উপরের অংশ এক হাত দিয়ে আটকিয়ে এবং অন্য হাত দিয়ে ব্যাগটিকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে হবে কোন ছিদ্র পথে পানি বেরিয়ে যায় কিনা। ছিদ্রযুক্তু পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে।

নিম্নে ৬৬ সেমি. x ৪৬ সেমি আকারের পলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহনের পরিমাণ দেয়া হল-

পোনার প্রজাতি দূরত্ব বয়স পরিমাণ
কৈ ১৫-১৮ ঘন্টা ২০-২১ দিন ২৫০-৩০০ গ্রাম
শিং ১৫-১৮ ঘন্টা ৩০-৪০ দিন ৩০০-৪০০ গ্রাম
মাগুর ১৫-১৮ ঘন্টা ২৫-৩০ দিন ৩০০-৪০০ গ্রাম
কৈ/শিং/মাগুর ৪-৬ ঘন্টা ২০-২৫ দিন ১.০-১.৫ কেজি
পাবদা/গুলশা ১৫-১৮ ঘন্টা ২৫-৩০ দিন ২৫০-৩০০ গ্রাম
মলা/পুটি ব্রুড ৪-৬ ঘন্টা ২৫০-৩৫০টি

 

পলিথিনের ব্যাগের ১/৩ অংশে পানি ভরে তাতে প্রয়োজনীয় পরিমান পোনা রেখে পলিথিনের বাকী অংশে অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ করে সুতলি / রাবার ব্যান্ড দিয়ে ভাল ভাবে বেঁধে নিতে হবে যাতে অক্সিজেন বেরিয়ে যেতে না পারে। পোনা পরিবহণের জন্য পানির তাপমাত্রা ২২-২৭০ সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখা উচিত। পানির তাপমাত্রা বেশী হলে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
পরিবহণকালে পলিথিন ব্যাগ যাতে ছিদ্র হতে না পারে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। সম্ভব হলে পলিথিন ব্যাগ বস্তায় ভরে পরিবহণ করতে হবে।

৩) অন্যান্য পদ্ধতি:
উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও নিমেণাক্ত পদ্ধতিতে পোনা পরিবহণ করা যায়-

  1. ইনসুলে&&টড ট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহণ করা যায়।
  2. ক্যানভাস ট্যাংকের মাধ্যমে পিক-আপ বা অন্য কোন গাড়ী ব্যবহার করে এরেটরে সেট করে পোনা পরিবহণ করা যায়।
  3. আজকাল ভ্যান গাড়ীতে / টেম্পুতে মোটা পলিথিন শীট নিয়ে ক্যানভাস ট্যাংক তৈরি করেও পোনা পরিবহণ করতে দেখা যায়।

পোনা পরিবহণে সতর্কতাঃ

  1. একটি পাতিলে বা ড্রামে /ট্যাংকে/ব্যাগে একই আকারের পোনা পরিবহণ করা উচিত।
  2. পোনা পরিবহণ করার আগে পোনাকে পেট খালি করে কন্ডিশনিং করে নিতে হবে।
  3. দুর্বল পোনা পরিবহণ করা যাবে না।
  4. পরিবহণকালে সরাসরি নলকুপের পানি ব্যাগে/পাতিলে/ড্রামে/ট্যাংকে দেয়া উচিত নয়। এতে পোনা মারা যেতে পারে।
  5. প্রয়োজন হলে একই তাপমাত্রার ভাল পানি দিয়ে ব্যাগের বা পরিবহণ পাত্রের পানি বদলানো যেতে পারে।
  6. শিং ও মাগুর মাছের পোনা ড্রাম /পাতিলে পরিবহণকালে পেটের দিক থেকে ঘষা খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি       হয়। তাই এগুলোকে ব্যাগে পরিবহণ করাই ভাল। ব্যাগে পরিবহণ করে পোনাকে অবশ্যই শোধন করে পুকুরে ছাড়তে হবে এবং কম পরিমাণ পোনা এক সাথে পরিবহণ করতে হবে।
  7. লোহার /প্লেনশীটের ড্রামের পরিবর্তে প্লাষ্টিক ড্রামে পোনা পরিবহণ করাই ভাল। তাতে ক্ষতি কম হয়।

তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh

Answer for ছোট মাছের পোনা পরিবহণের সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি কোনটি? বিস্তারিত জানতে চাই