আমাদের দেশে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের চাষ এখন পর্যন্ত সনাতন (Traditional) বা উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। কৈ, শিং ও মাগুর মাছের ক্ষেত্রে নিবিড়/আধা-নিবিড় চাষাবাদ এখন পর্যন্ত এ দেশে ব্যাপক শুরু হয় নাই। তবে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে থাই কৈ, শিং, মাগুর ও পাঙ্গাস এর চাষাবাদ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে কিছু বড় উদ্যোক্তা নিবিড় চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের চাষ আরম্ভ করেছে। এসব পদ্ধতিতে চাষাবাদ স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক পোনা মজুদ করে অধিক উৎপাদন ও অধিক মুনাফা অর্জন হলেও পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন-
- পুকুরে অধিক পরিমাণ মাছ মজুদ থাকায় বেশি পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন হয় এবং প্রয়োগকৃত খাবারের একটা অংশ বিনষ্ট হয়। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক মাছের বর্জ্য পুকুরে জমা হতে থাকে। এর ফলে পচন ক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ H2S, CO2 উৎপন্ন হয় ও অধিক পরিমাণে এ্যমোনিয়া জমা হয় এবং এর জন্য পুকুরের পানি দূগর্ন্ধ হয়ে যায় এবং মাছ মারা যায়। তাছাড়া আরো অনেক রাসায়নিক দ্রব্য তলায় জমা হয় এবং প্রচুর গ্যাসও উৎপন্ন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুকুরের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানির পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়ে বা কোন রাসায়নিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়;
- কোন কোন স্থানে শামুক / ঝিনুক প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে আহরণ করে এদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট জলাশয়সমূহের প্রতিবেশ (Ecosystem) বিঘ্নিত হয়। এটা এক ধরণের সুস্থ পরিরেশের বিরুদ্ধে কাজ;
- পুকুরে এসকল মাছ চাষের ফলে ঔষধ/বিষ ব্যবহার করে অন্যান্য সব মাছ ও জলজ প্রাণিসমূহ মেরে ফেলার ফলে এক্ষেত্রে প্রজাতিগুলোর জীববৈচিত্র্য ধবংস হয়;
- বিভিন্ন ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি পুকুরে প্রয়োগের ফলে এগুলোর একটি অংশ মাছের শরীরে সঞ্চিত হয় এবং পুকুরে Residual effect থেকে যায়, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ও সংক্রমিত হয়;
- একবার আধানিবিড়/নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হলে জলজ পরিবেশের মারাত্নক পরিবর্তনের কারণে পুকুর না শুকিয়ে এবং তলার কাদার উপরের অংশ না সরিয়ে পরবর্তীতে মাছ চাষ করা হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে তলার কাদা কৃষিকাজে ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়;
- প্রচুর পচন ক্রিয়ার ফলে পানি দুগর্ন্ধযুক্ত হয়। সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী বাতাসও দুগর্ন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে এবং বিরূপ পরিবেশের সৃষ্টি হয়;
- কৈ ও পাঙ্গাস চাষের পুকুরে প্রচুর প্ল্যাঙ্কটন উৎপন্ন হয় যা সিলভার কার্প কোনভাবেই খেয়ে শেষ করতে পারে না, এমন কি সিলভার কার্প মারা যেতে থাকে। এই অত্যধিক প্ল্যাংঙ্কটন একদিকে পুকুরের জন্য ক্ষতিকর অন্যদিকে মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। এ প্ল্যাংঙ্কটন একসময়ে পচে গিয়ে পানি ও পাশ্ববর্তী এলাকা র্দুগন্ধ করে ফেলে;
- অনেক খামারী ব্যয় সমন্বয়ের জন্য হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর;
- অপরিকল্পিতভাবে এধরনের খামার স্থাপনের ফলে উপরের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় যা কৃষি ফসল ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
তথ্যসূত্র: DoF
Answer for পরিবেশের ওপর কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের প্রভাব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী