প্রশাসন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্তকরণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। মাছ বা খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ফরমালিনের ব্যবহার জনস্বাস্থের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি সমাজ, রাষ্ট্র ও নৈতিকতাবিরোধী কাজও বটে। এর অপব্যবহার রোধ করা সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। কোন একটি প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এর অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব নহে। সামষ্ঠিকভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। এটি শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। মানুষের নৈতিকতাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। নৈতিকতা হলো মানুষের মানবিক গুণাবলীর একটি প্রধান বিষয়। তাই এক্ষেত্রে প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল যাদের বিস্তৃতি গ্রাম পর্যন্ত রয়েছে, তারাই পারেন ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে বাস্তবসম্মত ভূমিকা রাখতে। নিমেণ ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।

  • জেলা ও উপজেলা প্রশাসন
    জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভিন্ন সভাসমাবেশ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশ করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন। তাছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ সরকারের নির্বাহী আদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়ে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে বিশেষ ভূমিকা রাধতে পারেন।
  • মৎস্য অধিদপ্তর
    মাছে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে মৎস্য অধিদপ্তরের ভূমিকাই নেতৃস্থানীয়। ফরমালিনের কুফল সম্পর্কে ভোক্তা, মৎস্য ব্যবসায়ীসহ সকলের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টির মূল দায়িত্ব মৎস্য অধিদপ্তরের। বিশেষকরে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এজন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান – যেমন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতিসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগনকে সাথে নিয়ে কার্যকরভাবে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
  • স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহ
    শহর পর্যায়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এবং গ্রাম পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ ফরমালিনের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষকরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ প্রতিনিয়ত তারা নিজ এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানে ফরমালিনের কুফল এবং বিদ্যমান আইনে মাছ ও খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারে শাস্তি সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করে মানুষকে সহজেই সচেতন করতে পারেন।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
    খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাত্যহিক দায়িত্ব। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে একজন সেনিটারি ইন্সপেক্টর পদস্থ আছেন; যার মূল দায়িত্ব খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করা। সেনিটারি ইন্সপেক্টরগণ বিভিন্ন বাজারে মাছে ফরমালিনের উপস্থিতি সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
  • বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতি
    বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগী সংগঠন, এনজিও, কৃষক সমিতি, মৎস্যজীবী সমিতি, মৎস্যব্যবসায়ী সমিতি, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি, সামাজিক সংগঠন ইত্যাদিকে সম্পৃক্ত করে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখা যায়।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
    বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে প্রচার-প্রচারণা, প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যপক অবদান রাখতে পারেন।
  • প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া
    জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা খুবই ইতিবাচক। স্বল্প সময়ের মধ্যে, ব্যাপক জনগোষ্ঠির মাঝে কোন তথ্য কার্যকরভাবে পৌছে দেওয়ার জন্য এই মিডিয়া দু’টিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, রেডিও-টেলিভিশনে নাটিকা, জিংগেল, ডকুমেন্টারি, ফিলার, টকশো ইত্যাদি প্রচার করা গেলে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাবে।
  • অন্যান্য প্রচার মাধ্যম
    • লাইভ শোঃ নাটিকা, পথনাটক, গান, ইত্যদির মানুষের মনে বিশেষভাবে দাগ কাটে। তাই, এই টুলস্ গুলো ব্যবহার করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যপক সফলতা পাওয়া সম্ভব;
    • সভা-সমাবেশ, মিটিং, কর্মশালা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা যায়;
    • জনসচেতনতা সৃষ্টিতে পোস্টার ও লিফলেট প্রচার একটি সুন্দর মাধ্যমে;
    • জনবহুল স্থান বিশেষকরে হাটে বাজারে মাইকিং ও ঢোল মাধ্যমেও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যায়;
    • ব্যক্তিগত যোগাযোগও সচেতনতা সৃষ্টির একটি অন্যতম মাধ্যম।

     

তথ্যসূত্র: DoF

Answer for ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে আমরা কি করতে পারি?