ছোট মাছ শুটকিকরণ
বাংলাদেশে সাধারণত শীত মৌসুমে সূর্যালোকে শুকিয়ে মাছ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করা হয়। এ সময় আর্দ্রতা ও বৃষ্টি কম থাকে এবং সূর্যালোকের দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য মাছ শুটকি করার জন্য পরিবেশ অনুকুল থাকে। ছোট মাছ সাধারণত নিম্নোক্ত দু’ভাবে শুটকি করা যায়।
১। প্রচলিত পদ্ধতি
প্রচলিত পদ্ধতিতে ছোট মাছ শুটকি করার সময় নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়ঃ-
- প্রথমে আহরিত মাছ পানি দ্বারা ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেয়া হয়।
- এরপর মাছগুলোকে পলিথিন সিট বা বাঁশের চাটাইয়ে বিছিয়ে উন্মক্ত স্থানে সুর্যালোকে শুকাতে দেয়া হয়।
- আবহাওয়া, মাছের আকার ও পুরুত্বের ওপর নির্ভর করে মাছ শুকাতে সাধারণত ৫-৭ দিন সময় লাগে।
- এভাবে শুকানো শুটকি মাছে সাধারণত ১০-১২% জলীয় অংশ থাকে।
২। পলিথিন তাঁবু বা সোলার টেন্ট ড্রায়ারে মাছ শুকানো
এটি সূর্যালোকে মাছ শুটকি করার একটি উন্নততর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মাছ শুকানোর জন্য বাঁশের কাঠামো দিয়ে দু’চাল বিশিষ্ট ঘরের কাঠামো তৈরি করে তার ওপর পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে তাঁবুর আকার দেয়া হয়। তাঁবুর পেছনের দিকে ও মেঝেতে কালো পলিথিন থাকে এবং সূর্যের দিকে মুখ করা পাশে স্বচ্ছ পলিথিন থাকে। স্বচ্ছ পলিথিন ভেদ করে সূর্যরশ্মি তাঁবুতে প্রবেশ পথে এবং পেছনের কালো পলিথিনে সূর্যরশ্মি শোষিত ও বিকিরিত হয় ফলে তাঁবুর ভিতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাঁবুর ওপরের দিকে ছিদ্র রাখা হয়, যে পথে জলীয় বাষ্প বের হয়ে যেতে পারে। নিচের দিকেও এক পাশে ছিদ্র রাখা হয়, যে পথে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। মাছকে ঝুলিয়ে রাখার জন্য তাবুর ভিতরে আনুভূমিকভাবে বাঁশের তাঁক স্থাপন করা হয়। সূর্যের আলোর তাপে তাঁবুর তাকে রক্ষিত মাছ থেকে পানির জলীয় বাষ্পাকারে ওপরের ছিদ্রসমূহ দিয়ে বের হয়ে যায়। এখানে তাপমাত্রা সাধারণত ৪৫-৫৫Oসে. এর মধ্যে থাকে, যা সূর্যের আলোর তাপমাত্রা থেকে অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে শুটকি করতে সাধারণত ৩-৫ দিন সময় লাগে।
মাছ শুকানোতে সর্তকতা
- মাছ শুকানোর সময় অবশ্যই টাটকা মাছ ব্যবহার করতে হবে।
- শুটকি তৈরির সময় ব্যবহার্য সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে ও পরে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারকালে ক্লোরিন পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মাছ শুকানোর পূর্বে লবণ দ্রবণে চুবিয়ে নিলে শুকানোর সময় মাছি ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এছাড়াও স্বচ্ছ পলিথিন বা জাল দিয়ে ঢেকে দিলে মাছি ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়।
- উন্মুক্তস্থানে শুটকি মাছ মজুদ বা গুদামজাত করা উচিত নয়।
শুটকি মাছ সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ
মাছ শুটকি করার পর সংরক্ষণকালে তার গুণাগুণ কেমন থাকবে তা নির্ভর করে গুদামজাতকরণের ওপর। শুটকি মাছ গুদামজাত করার সময় ছিদ্রহীন পলিথিন ব্যাগে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। তাছাড়া টিনের পাত্রেও শুটকি মাছ মজুদ করা যায়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে টিন যেন বায়ু নিরোধক হয়। শুটকি মাছ চটের বস্তায় মজুদ করা যায়। এক্ষেত্রে শুটকির বস্তা শুকনা ও পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে গুদামজাত করলে শুটকি মাছ অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
তথ্যসূত্র: DoF, Bangladesh