পানিতে প্রধাণত দুই রূপে আয়রন দেখতে পাওয়া যায়। যথা- ফেরাস (ferrous) যা পানিতে দ্রবীভূত যৌগ হিসেবে থাকে। অন্যটি ফেরিক (ferric ) যার অধিকাংশই অদ্রবীভূত যৌগ হিসেবে হয়ে থাকে। এই দুটি রূপের অনুপাত নির্ভর করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, পানির পিএইচ এবং পানির অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতির পরিমাণের উপর।
কম পিএইচ ও কম অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পানিতে দ্রবীভূত আয়রণ যৌগ মাছের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ – মাছের ফুলকার উপরিতল ক্ষারীয় হওয়ার প্রবণতা দেখায় এবং পানিতে দ্রবীভূত ফেরাস আয়রণ অক্সিজেন যুক্ত হয়ে অদ্রবীভূত ফেরিক আয়রণে পরিণত হওয়ায় ফেরিক আয়রণ ফুলকার ল্যামিলার (বহুবচনে ল্যামিলি, (lamellae)) উপর একটি প্রলেপ সৃষ্টি করে যা শ্বসনে (গ্যাসীয় আদান-প্রদান) বাঁধা দেয়।  অন্যদিকে কম তাপমাত্রায় আয়রণের উপস্থিতিতে আয়রণ সঞ্চয়কারী ব্যাকটেরিয়া ফুলকার উপর আরও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং ফেরাস আয়রণের জারণে (oxidation) অবদান রাখে। ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার সূত্রাকার কলোনি ফুলকার উপরিতলকে আবৃত করে ফেলে। শুরুতে এটি বর্ণহীন থাকলেও পরবর্তীতে এটি বাদামী বর্ণ প্রদান করে। ফলে পানিতে অদ্রবীভূত আয়রণ ও আয়রণ সঞ্চয়কারী ব্যাকটেরিয়া ফুলকার উপরিতলের শ্বসনের কার্যকর অঞ্চলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, শ্বসনতলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যার প্রভাব পড়ে শ্বসনের উপর এবং মাছের শ্বাসরোধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। একই ভাবে আয়রণ মাছের ডিমের উপরিতলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে অক্সিজেন স্বল্পতায় ডিম না ফুটে মারা যায়।
মাছের উপর আয়রণের ক্ষতিকর মাত্রা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন কারণ অনেকগুলো প্রভাবক এককভাবে ক্ষতি করার পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে ক্ষতি করে থাকে। তারপরও বলা যায় রুই জাতীয় মাছের জন্য ০.২ মিলিগ্রাম/লিটারের অধিক আয়রণ ক্ষতিকর।
 
তথ্যসূত্র:

Answer for সরবরাহকৃত পানিতে প্রচুর আয়রণ রয়েছে। এতে মাছের কোন ক্ষতি হয় কি?